>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • ব্যানার্জী পর্ণা।

    SongSoptok | 8/10/2014 |

                                                   "ইউ টার্ন"




    কিছু কথা বলতে গেলেই একটা টান এর দরকার পড়ে, ব্যথা চাই ব্যথা ! নাহলে কিছুই খোরাক পাবে না তোমার গল্প লেখার । নেশার বশবর্তী না হয়ে মনের দরজা খোলা বড্ড ন্যাকামি লাগে ! ধুর মশাই, বুঝলে না তো ? –জানতাম বুঝবে না –দাঁড়াও চার পেগ শেষ হল, এবার সুখ টান দিয়ে বলা শুরু করি। আচ্ছা বলতো তোমার মনে প্রশ্ন এলো কেন যে আমি সব জায়গা ছেড়ে বারেবারে বমডিলায় আসি ? –হ্যাঁ, সেই জন্যই তো আপনার কাছে আসা –এই নিয়ে সাত বছর দেখছি আপনাকে প্রতিবার শীত আর বর্ষায়। আপনি এখানে আসেন যখন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ অনত্র যায়। অথচ আপনি একা কিসের খোঁজে আসেন বলুন তো ? –দাঁড়াও দাঁড়াও এতো তাড়া কিসের ? সবে তো তোমার সাথে আলাপ হয়েছে তিন বছর হলো এর মধ্যেই অধৈর্য হয়ে পড়লে কি চলে নাকি ! –না না হেসে বললাম আমি, কিন্তু স্নেহাশীষ বাবু কে বোঝাতে পারলাম না যে আমি কতোটা ইচ্ছুক ওনার ব্যাপারে জানতে। উনি বোধহয় সেটা বুঝলেন। তাই বললেন এসো অর্পণ বারান্দায় বসি, বেশ ভাল লাগবে আজকের বৃষ্টি। –আমি ওনাকে ফলো করলাম, উনি বসলেন ইজি চেয়ারে আর আমি একটা বেতের চেয়ারে হেলান দিলাম। বেশ আরাম দায়ক এখানকার সব জিনিস। তিজিল এলো পাকোড়া নিয়ে, বলে গেলো ডিনার রেডি সাব, স্নেহাশীষ বাবু বললেন, ঢেকে রেখে চলে যা আমি গরম করে নেব। –বৃষ্টি হচ্ছে সাবধানে যাস, আবার কোথাও মদ খেতে বসিস না যে বউ খুঁজতে বেরোবে। –হেসে বলল না না সাব নেহিন হোগা আউর –আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম দাদা, আমার উত্তরটা কি পাবো না ? আজ না হয় দিরাং রিসোর্ট তৈরি হয়েছে, এর আগেও তো আপনি এখানকার লোকালিদের বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে থাকতেন, তবুও এখানে আসতেন ! আমার নাহয় পেটের তাগিদ, আপনার কিসের তাগিদ শুনি ? আজ না শুনে ছাড়ছি না, যা খারাপ ভাবার ভাবুন, আমার কিন্তু গল্প চাই সত্যি গল্প, জীবনের গল্প। বাস্তবের মুখোমুখি করতে চাই আমার পাঠক কে। –দাঁড়াও দাঁড়াও আর এক পেগ বানিয়ে আনি। তবে অর্পণ আমি কিন্তু গল্প-কবিতার লোক নই, তুমি ভুল জায়গায় গল্প খুঁজছ এটা বলতে পারি। –ভুল তো ভুল, তাই সই। কিন্তু আজ আপনাকে ছাড়ছি না দাদা। আপনি বসুন আমি বানিয়ে আনছি, ছোট না বড় এটা বলুন ব্যাস। –বড়ই এনো, আর নিজে যদি খাও তাহলে সাথে সেটাও এনো, লজ্জা করোনা। –আমি হেসে উঠে গেলাম। –স্নেহাশীষ দা, ও দাদা বলে ঠেলা দিতেই উনি হম বললেন ! চোখ লেগে এসেছিল, এসো, বসো, প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছো বুঝি ? রোমান্টিসিজম, নাকি অন্য কিছু ? –না না দাদা কিছুর গন্ধই পাচ্ছিনা, শুধু ইচ্ছেটা বাড়ছে আর নেশাটাও । –নিজের সাথে দেখা করতে আসি এখানে –মানে ? ঠিক বুঝলাম না দাদা, নিজের সাথে মানে ? –আরে অর্পণ নিজের খোঁজ পাওয়া বিশাল ব্যাপার ! আমি তার খোঁজ করছি –ধুর দাদা বলুন না –আট বছর হলো বাবা মারা গেছেন, মৃত্যুর সময় জানতে পারি উনি আমার বাবা নন ! – তার পরের বছর থেকেই কি তাহলে বাবার খোঁজে এখানে আসেন দাদা ? –হা হা হা জানতাম এটাই বলবে –আমি থ হয়ে গেলাম ! বোকা বোকা লাগছিলো নিজেকে, না না দাদা আসলে যেটা মনে হল সেটাই বলে ফেললাম, কিছু মনে করবেন না –আরে না না অর্পণ আমি কিছুই মনে করিনি, তবে তোমার ভুল আজ্যাম্পসানে দাড়ি টানলাম ।। – ২ কাশ্মীরি কাজ করা পার্টিশনটা আমাকে বহুবার অনুপ্রাণিত করেছে গল্প কবিতা এবং প্রেম করবার জন্য, কিন্তু ওই যে বলেছিলাম না একটু অন্য মেজাজের আমি, তাই কিছুতেই প্রেম বা কবিতা কোনটাই হয়নি। তার বদলে দেখতাম তাকিয়ে ওর গায়ের ওপর নকসার কারিকুরি। উফ্‌ কি দারুণ, প্রতিটি কলকা যেন একটা গল্প তৈরি করে। শুনে তো অর্পণ পুরো হা ! –আপনি নাকি গল্প কবিতার ছায়াও মাড়াতে চান না ? তবে যে নকসার ভেতর গভীরতা খুঁজে পেলেন ! –প্রশ্নটা আসবে আমি জানতাম, কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি এক্সপেক্ট করিনি। –প্লিজ আপনি আমাকে এই ভাবে নিরাশ করতে পারেন না, ঠিক যতোবার বুঝতে চেষ্টা করছি একটা কিছু অভিনবত্য খুঁজে পেতে চলেছি, অমনি আপনি হেসে জল ঢেলে চলে যাচ্ছেন ! দাদা আজ কিছুতেই শুনবো না। আমি কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছি আপনার কথার জালে, তাই বলে ভাববেন না আমি ছেড়ে দেবো, আজ কোন কিছুতেই আমাকে দিকভ্রষ্ট হতে দেবেনা এই প্রকৃতি। –হাসলেন স্নেহাশীষ দা। আরে আমি কোথায় গল্পের শুরু করতে চাইছি আর তুমি ভায়া আমাকে বলছ আমি গল্প বলছিনা এ কি রকম অন্যায় বলত দেখি ? –দাদা বমডিলা ছেড়ে হটাৎ করে কাশ্মীরি কাজ তো, তাই আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ! মিল যে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আগে বলবেন তো এটা গল্পের'ই অংশ তাহলে আর বাঁধা দিতাম না। কি যে করেন দাদা ! আপনাদের মতো গুণী মানুষদের চেনা বড্ড কষ্ট। –অর্পণ একটা সিগারেট ধরালো ! বেচারা আর বোধহয় টেনশন ধরে রাখতে পারছিলো না। রাত বাড়বার সাথে সাথে বৃষ্টির তেজটাও কমার বদলে বাড়তে শুরু করলো। ঘড়ির কাঁটা চলছে তার নিজের তালে, আমি আবার বললাম দাদা বলুন না কি মধু আছে এই পাহাড়ে ? –হেসে বললেন অর্পণ তোমার স্নেহাশীষ দা এখনও কিন্তু মাতাল হয়নি। –না না ছি মাতাল বলব কেন আপনাকে ! কিন্তু ইচ্ছে যে আর চেপে রাখতে পারছিনা –শোন একটা ঘটনা বলি –বলুন বলুন, আমি আমার চেয়ারটা আরও এগিয়ে নিয়ে বসলাম –অর্পণ, প্রথমবার আমার বমডিলায় আসার কারণ শুধুই প্রকৃতির টান ছিল, সেবার আমি আমার স্বপ্নের ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়েছিলাম জীবনের মুখোমুখি হবার তাগিদে। পাহাড় বলে নয়, আসমুদ্র হিমাচল ঘুরে বেড়াবার সখ নিয়ে। তবে সমুদ্রের গভীরতার থেকে পাহাড়ি স্তব্ধতা আমাকে বেশি হাতছানি দেয়, তাই হয়তো প্রথমেই সমুদ্র ছেড়ে পাহাড় আর বমডিলায় এসেছিলাম। অবশ্য এর কারণ ছিলো বিমান (আমার স্কুলের বন্ধু) এখানে পোস্টেড ছিল বলে। টিকিট কেটে সোজা অরুণাচল। সবাই বলে যদি জান্নাত দেখতে চাও পৃথিবীর বুকে তাহলে কাশ্মীর যাও। আর আমি বলব প্রকৃতির স্তব্ধতার মাঝেও যে এক সৌন্দর্য আছে সেটা যদি অনুভব করতে চাও তাহলে এসো এখানে। –অর্পণের উস্কুশানি বেড়ে গেছে দেখে বুঝলাম ও কিছু খুঁজছে। ভীষণ চঞ্চল দুটি চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আরও কিছু খিদে... ... –বিমান তখন এখানকার একজনের বাড়িতেই পিজি হিসেবে থাকতো। সেখানে সিট গোনা গুন্তি, নো এক্সট্রা অ্যালাউড। অগত্যা আমাকে বিমান তার অফিসের এক কলিগের বাড়িতে আশ্রয় দিল। এখানকার লোকাল, তবে ছেলেটি আমাদের বয়েসি বা একটু ছোটও হতে পারে, তবে চাকরি ক্ষেত্রে বাইরে ঘুরেছে দেখে বাংলাও ভালই বোঝে। আমাকে হাত পা ধুয়ে বিশ্রাম করতে বলে সে অন্য ঘরে গেলো। কিছুক্ষণ বাদে দেখি এক হাতে আপাং আর এক হাতে (খুরা) রাইস কেক নিয়ে ফিরে এলো। –চলুন, একটু ফ্রেশ হয়ে নিন ভাল লাগবে, আপনি আবার এসব খান তো ? –হেসে বললাম এসব খাই, তবে আপাং এখানকার ফেমাস খাইনি কখনো –খান, এটা ঘরেই বানানো। –আচ্ছা ভাই নাম টা তো জানা হল না, হাতটা বাড়ালাম করমর্দন করব বলে –তাতসুং হেয়ার মিস্টার রয় –আই অ্যাম স্নেহাশীষ, ইউ ক্যান কল মি রয়। সেই সন্ধ্যেতেও বেশ বৃষ্টি ছিল, অবশ্য এখানে তো বেশির ভাগ সময় বৃষ্টি না হলেই বরঞ্চ একটা কিরকম মনে হয়। –এতোক্ষণ অর্পণের একটাও আওয়াজ পাইনি, না দেখেছি একটুও নড়াচড়া ! পাথরের মতন শুনছিল আমার কথাগুলো। –হঠাৎ বাচ্চাদের মতো বলে উঠল তার পর দাদা ? –আমি বললাম গলা যে শুকিয়ে আসল, একটু কিছু খেয়েনি তার পর না হয় আবার শুরু করব দুজনে। –আচ্ছা দাদা, তবে আমি কিন্তু ডিনারটা আজ এখানেই সারছি, কোথাও যাচ্ছিনা। –হেসে বললাম জানি, তুমি বলার আগেই আমি তোমার ভাগটা বলে রেখেছিলাম তিজিল কে, আজ কষা চিকেন আর পরোটা, সাথে নাং-গাতক ও আছে (ফিশ কারি) ভালই জমবে, চল খেয়ে নিয়ে বাকিটা সারবো। –ডিনার টেবিলের পাশে দেখি একটা বুক র্যাক আছে, সেখানে খামতিস স্ক্রিপ্ট রাখা –দাদা আপনি খামতিস ভাষা পড়তে পারেন? –ওই একটু শিখেছি, অনেক দিনই তো হলো এখানে আসছি, শিখে গেছি অল্প অল্প, খাও খাও খাওয়াতে মন দাও –সে না হয় দিলাম, কিন্তু আপনি যে আরও কি লুকিয়ে রেখেছেন সেটা ভেবেই মাথা ঘুরছে । –বেশ ভালো রান্না হয়েছে তার ওপর বৃষ্টি দারুণ লাগছিল..... –স্নেহাশীষ দা আপনি কি কিছু নিয়ে রিসার্চ করছেন? বৈজ্ঞানিক নাকি ফেলুদা, হাত টা চাটতে গিয়ে বললাম –হেসেই ফেললেন উনি। আরে পাগল হলে নাকি অর্পণ ? আমি হবো প্রফেসর শঙ্কু না হয় ফেলুদা ? তোমার নেশা বেশ ভালই ধরেছে কিন্তু ! –না না দাদা ধরেনি, তবে আপনার প্রতি একটা নেশা তো নিশ্চয়ই আছে সেটা মানতে আপত্তি নেই বা লজ্জাও নেই, তাই আমার এতো প্রশ্ন –শেষ করেই তো আবার এগুবে আমাদের আসল পর্বের দিকে –তাকালাম ওনার দিকে রিয়াক্সান দেখার জন্য, কিন্তু ওমা উনি তো মনোযোগ সহকারে খেতে ব্যস্ত, তাহলে কি আমার কথা কানেই তুললেন না ! রাগ হচ্ছিল না যে তেমন নয়, তবুও বললাম দাদা আপনি কি লিক-তাই ভাষা পড়তে জানেন ? –হাত ধুয়ে এসো অর্পণ, চলো বারান্দায় বসে বলছি –একটা সিগারেট ধরাও তো –হ্যাঁ দাদা দিচ্ছি –তাতসুং আমাকে একটা ফা-ন্যাপ (তরবারি) দিয়েছিল, সুক্ষ্ম হাতির দাঁতের কাজ করা বাঁধানো হাতল ছিল তাতে। প্রথম দিনই আমাকে ওটা গিফট করে সে। "মিস্টার রয় এটা আপনার"।আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। বাড়িতে থাকতে দিয়ে স্নাস্ক খেতে খেতে গিফট কেন হটাত ! জিজ্ঞেসও করলাম, শুধু হেসে বলেছিল-মোমেন্ট অফ লাভ। সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু তাতসুং সেটা তো বাড়ি ফেরার সময়ও দিতে পারতে, কিন্তু আজ কেন? তাড়াচ্ছো নাকি আমাকে ? –আরে না না মিস্টার রয়, এমনি। বেশ ভালো লাগল আপনাকে তাই। আমরা কি এতোই খারাপ যে গিফট করতে পারিনা ? –আমি লজ্জায় পড়ে আর কিছু বলতে পারিনি। রাতে বিছানায় শুয়ে জিনিসটাকে ভালো করে দেখতে দেখতে কখন চোখ লেগে এসেছে জানতেও পারিনি। সকালে বিমানের ধাক্কায় আমি প্রায় বিছানা থেকে পড়েই যাচ্ছিলাম। সামলে নিয়ে উঠে বসতেই কি রকম একটা লাগলো ! মাথাটা ঝিম ধরে আছে, আমি তাকিয়ে বললাম তুই কখন এলি ? –বিমান প্রায় ধমকিয়ে বলল আরে ধুর কি হয়েছে, তোকে কখন থেকে ডাকছি ! –আমি তো প্রায় অবুঝের মতন তাকিয়ে বললাম কি বলছিস ! –ক'টা বাজে ? অর্পণ প্রায় সম্বিৎ ফিরে পেল –হ্যাঁ দাদা দেখছি। দুইটা বাজতে এখনও দশ মিনিট বাকি –ও, চলো আজ তাহলে উঠি –কি বলছেন দাদা কোথায় উঠবেন, –শুতে যাবো না ? –আরে না না, দয়া করুন, আর একটু বলুন, ইচ্ছে যে আর বাঁধ মানছে না –অর্পণ আজ থাক কাল বাকিটা বলব –না দাদা আমার তো ঘুম আর হবেনা, তবে আপনার যদি অস্বস্তি লাগে তাহলে থাক –না অর্পণ আমার প্রবলেম নেই, তাহলে বরঞ্চ আর এক পেগ বানিয়ে আনো আমি একটু হেঁটেনি বাড়ির সামনে দিয়ে। জানো অর্পণ লিক তাই ভাষাটা তেমন কিছু কঠিন নয়, তবে হ্যাঁ লেখা পড়তে কষ্ট নিশ্চই হবে কিন্তু যখন ওরা গল্পগুলো বলে তোমার ইচ্ছে করবে আরও শুনি। তুমি ছোটবেলায় জাতকের গল্প শুনেছ বা পড়েছ ? ওগুলো এদের থেকেই এসেছে –আমি অবাক হয়ে স্নেহাশীষ দার কথাগুলো শুনছিলাম। কি জ্ঞান লোকটার, কিন্তু থাকেন কতো সাধারণভাবে! আচ্ছা দাদা একটা কথা জিজ্ঞেস করি ? –হ্যাঁ বলো। বিমান দা যখন আপনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলল তখন আপনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কেন ? –চল বসি গিয়ে বারান্দায় –আসুন চেয়ার রেডি –অর্পণ আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কারণ, আমি তখন রাস্তার ধারে এক চালায় শুয়ে আছি আর হাতে শক্ত করে ধরা তরবারিটা। তাতসুং এর খোঁজ নেই ! ওর বাড়িতেও আমি নেই ! –ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না দাদা –হ্যাঁ অর্পণ ঠিকই বলেছ, না বোঝার মতন'ই ঘটনা। শুতে গিয়েছিলাম, শেষ এটাই আমার মনে আছে, আর কিছুই মনে করতে পারছিলামনা। বিমান আমাকে বারে বারে প্রশ্ন করছিল, কিন্তু উত্তর ছিলনা আমার কাছে ! এটাও বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কি করে ঘটে গেলো এতোসব, আর তাতসুং'ই বা কোথায় ? বিমান আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে নিয়ে রওনা দেয় তাওয়াং গোম্পার দিকে। আমি তখন এতোটাই বিচলিত ছিলাম যে কিছু বলতে বা জিজ্ঞেস করবার ক্ষমতাও হারিয়েছিলাম। শুধু হাতের তরবারিটা কিসের জন্য শক্ত করে ধরেছিলাম সেটাও জানিনা, তবে ছিলাম, কারণ বিমান একবার নিতে চেয়েছিল আমার থেকে, আমি ছোট বাচ্চার মতন আরও জোরে চেপে ধরে বিরক্তি সহকারে ওর দিকে তাকাই। সেটাতেই ও হয়তো বুঝেছিল আমি অনিচ্ছুক তাই আর কিছু বলেনি। পৌঁছাতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল। শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ, সবার মধ্যে উজ্জ্বলতা যেন ভেতর থেকে আসছে। আজ সেই দিনটার কথা মনে পড়লে ছবিটা পরিষ্কার ভেসে ওঠে চোখের সামনে। সেদিনের চীনা লামাদের চোখগুলো, মুখের হাসিটা আজ জীবন্ত। বিমান তড়িঘড়ি করে আমাকে একটা ঘরের ভেতর নিয়ে যায়, ঘর অর্থাৎ লামাদের বাসস্থান। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মাদুর পাতা, কিছু বই রাখা, কিছু কাগজ রাখা আর একটা আসন ব্যাস। কিন্তু একটা অদ্ভুত শান্তি পেলাম। যে বিচলিত মন নিয়ে এসেছিলাম, দেখলাম নিজের থেকেই হটাৎ গায়েব ! সবে বিমান কে ডেকে কথাটা বলতে যাবো, সেই মুহূর্তেই এসে ঢুকলেন এক লামা। বিমান বলে উঠল নেইমা, ওহ্‌ সর‍্যি তেনযিন। আমি কিছুই বুঝলাম না। হাতের ইশারায় বলল বসতে, বসেও পড়লাম আবার। বিমান বলতে শুরু করল গড়গড় করে আগের রাতের ঘটনা, আর ওই লামা সুন্দর সৌম্য মুখ নিয়ে শুনতে শুরু করল। আমি তখন শ্রোতা বোধহয় ছিলাম না অন্য কিছু মনে চলছিল ! কারণ বিমান যে কথা বলতে বলতে থেমে গেছে সেটা খেয়াল করিনি আমি। কিন্তু তাকিয়ে ছিলাম লামার দিকে। সে বুঝেই আমাকে পরিষ্কার বাংলায় জিজ্ঞেস করল মিস্টার রয় ? জ্ঞান ফিরে পেলাম মনে হলো, হু, কিছু বলছেন আমাকে ? –হ্যাঁ আপনাকেই বলছি, তাতসুং কি গিফট্‌ টা দেওয়ার সময় কিছু বলেছিল ? –আমার কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ! একটু জোরেই বলে ফেললাম –হ্যাঁ –হেসে বললেন লামা জানি, আপনি শান্ত হোন, আর আমাকে বলুন তাতসুং কি কিছু বলেছিল আপনাকে গিফটের ব্যাপারে ? –না তেমন কিছুই তো বলেনি, একটু জল পাওয়া যাবে ? –লামা বলে উঠল নিশ্চই পাওয়া যাবে, আপনি বসুন, আমি আনছি –আমি কেমন যেন কেবলা হয়ে গিয়েছিলাম, বিমান ধমকিয়ে বলে উঠল কিরে, কি হলো তোর ? –কই কিছু না তো, সত্যি বলছি বিমান আমিও বুঝতে পারছিনা বিশ্বাস কর কি হয়েছে, তবে এমন কি'ই বা হল যে তুই আমাকে টানতে টানতে এখানে নিয়ে এলি ! –বিমান বলল তাতসুং কে কাল রাত থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা, আর তোর কাছে যেটা গিফট্‌ বলে ও রেখে গেছে, ওটা খামতি সম্প্রদায়ের অনেক পুরনো একটা তরবারি। ভালো করে দেখ হাতোলে কতকিছু লেখা আছে? –আমি তো অবাক ! কি বলছিস ? আমাকে দিতে যাবে কেন তাতসুং ? –সেটা তো আমিও জানিনা, তবে হ্যাঁ এটা বহু মুল্যবান, সেটা ফর সিউর –তুই কি করে জানলি বিমান ? আরে আমি এখানে কম দিন নেইরে, এর কথা অনেকের কাছে শুনেছি, এর মুল্য নাকি বিদেশে অনেক, কারণটা এখনও পরিষ্কার নয়, তবে কিছু তো একটা আছে –আরে ধুর, আমি রেগে বলে উঠলাম। তুই কিরে বিমান ? স্পেশাল কিছু হলে তাও আবার সম্প্রদায়ের, আর সেটা তাতসুং আমাকে দেবেই বা কেন বলতে বলতে লামা ঘরে ঢুকল জল নিয়ে –হ্যাঁ আপনাকে দিয়েছে তার কারণ আছে মিস্টার রয় –তাকিয়ে থাকলাম কেবলার মতন, আমাকে ? তাও রিজন ! কিছুই যে বুঝছি না, খুলে বলবেন প্লিজ ? –নিশ্চই, তার জন্যই তো আপনার বন্ধু আমার কাছে নিয়ে এসেছে। এটা এখানকার জিনিস নয়, মায়ানমারে শেষ দেখা গিয়েছিল সিপাও'তে। সেটি একটি ছোট্ট গ্রাম। আপনি যেটাকে হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছেন, সেটি ওই গ্রামের রাজবংশের শেষ স্মৃতি, কিন্তু সেটি চুরি যায় ওখানকার রাজপুত্রের সাথে ! রাজার শেষ বংশধরকে কারা এবং কেন গায়েব করে দিয়েছিল সেটার কোন ব্যাখ্যা কিন্তু নেই, আপনি জিজ্ঞেস করলেও আমি কিন্তু বলতে পারবোনা। –সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু এই তাতসুং কি তবে চোর না রাজপুত্র ? –লামা সাথে সাথে উত্তর দিল তাতসুং রাজপুত্র হতে পারেনা, কারণ এটা অনেক বছর আগের ঘটনা, অনেক কাল আগের কথা। তবে চোরের কোন বংশধর কিনা তাও সঠিক বলতে পারবনা। –আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম, তবে রাজারও তো বংশের কেউ হতে পারে –লামা বলে উঠল, হ্যাঁ হতেই পারে, কিন্তু সেটার কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। –বিমান বলে উঠল তেনযিন, –হ্যাঁ বল বিমান ? –আমি মাঝখানে বলে উঠলাম আপনি কে লামা ? তেনযিন না নেইমা ? –হেসে উত্তর দিলো আমার লামা হবার আগের নাম নেইমা যেটা আমার মা বাবা দিয়েছিল। আর লামা হবার পর আমার নাম তেনযিন গেম্পা হয়। হ্যাঁ এবার আমরা আবার আসল কথায় ফিরে যাই মিস্টার রয় –হুম সিওর – তাতসুং কে, সেটা জানা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি ও এখন কোথায় এটা জানা, আর কেনইবা আপনাকে এটা দিয়ে গেল ? –আমি আর বিমান এক সাথে এক শিয়ালের হুক্কা হুয়ার মতন বলে উঠলাম হুম ঠিক –কিন্তু লামা –আপনি আমাকে তেনযিন বলতে পারেন মিস্টার রয় –ওহ্‌ আচ্ছা – তো তেনযিন আমি কিন্তু এটা কাউকে দেবোনা এই বলে দিলাম। –অনেক বিতর্কিত জিনিস বুঝলাম, কিন্তু তাতসুং না আসা অবধি আমি এটাকে নিজের কাছেই রাখবো –এটা কি করে হয় মিস্টার রয় ? –অর্পণ হটাৎ এতোক্ষণে বলে উঠল ঠিক বলেছেন দাদা কেন দেবেন আপনি ? যখন বুঝতে পারলেন ওটা অতো মহা মুল্যবান বস্তু –না অর্পণ মূল্যবান দেখে রাখতে চাইনি আমি, আমার রাখার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, তাতসুং এমন কিছু বুঝেই একজন আমার মতো অচেনা মানুষকে এটা দিয়ে গেছে। সে চোরের দলের কেউ হতে পারে, আবার রাজার বংশধরও হতে পারে। তবে আমার কাছে যখন দিয়েছে, ও না ফেরা অবধি আমি এটা হস্তান্তর হতে দেবোনা। –বিমান বলে উঠল কিরে তুই রেখে কি করবি ? –আমি বললাম নো ওয়ে, আমি চললাম। –আরে দাঁড়া। এখান থেকে যাবি কি করে ? সন্ধ্যে হয়ে গেছে দেখ। শক্ত করে হাতে তরবারিটা নিয়ে আবার বসে পড়লাম। –তেনযিন বলল আপনার ইচ্ছে ছাড়া এখানে কেউ ওটাতে হাত দেবেনা মিস্টার রয়। ভয় নেই সবাই এখানে লামা। এদের কিছুতেই লোভ নেই। –আমি একটু রাগত স্বরেই বললাম হ্যাঁ আমি জানি, তা নেই যখন তাহলে এটাকে নিয়ে এতো টানাটানি কেন? –তেনযিন বলে উঠল ইতিহাসের পাতা ঘাটলেই দেখতে পাবেন খামতি ট্রাইবাল পিপল ওখান থেকে অনেক কাল আগে চলে এসেছে ইন্ডিয়াতে। কিন্তু ওদের বইতে লেখা আছে অনেক লোকাল গল্পেও পাবেন যদিও লিক-তাই ভাষায় লেখা। বলা আছে এই তরবারিতে অনেক অভিশাপ লুকিয়ে আছে। এক সিদ্ধ লামা কে এই তরবারি দিয়ে হত্যা করা হয় যেটা ধর্মে নিষিদ্ধ, তারপর থেকেই এই তরবারি অভিশাপ বহন করে চলেছে। এরাই বলে রাজবংশ ছাড়া অন্য কেউ রাখলে তার তো মৃত্যু অনিবার্য, আর রাজবংশের কেউ রাখলে সে রাখতে পারে কিন্তু অভিশাপ তাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। –ধুর তেনযিন, আমি বলে উঠলাম দেখুন, লামা ওই সব কিছুনা, ট্রেজার বুঝলেন, লুকনো গুপ্তধনের খোঁজ আছে নাহলে আপনারাও এর জন্য এতটা উৎসুক কেন হবেন ? –আপনি ভুলে যাচ্ছেন মিস্টার রয় লামাদের কিছু পাওয়ার আশা নেই, হ্যাঁ আমরা এটা সংরক্ষণ করতে চাই। যদি ইতিহাসের কথা সত্যি হয় তাহলে এ অভিশপ্ত, আর বৌদ্ধ ধর্ম বলে একে কোনো মনেস্টারিতে রেখে দিলে এর অভিশাপ কাউকে ছুঁতে পারবেনা। আর হ্যাঁ যদি ট্রেজার থাকে, যেটা আপনি ভাবছেন, তাহলে আমরা লামারা এটা নিয়ে কি করব ? সেটা তো কোন ভালো কাজেই লাগবে, নিজেদের স্বার্থে কিছু ব্যবহার করিনা আমরা। –সর‍্যি লামা, আমি মানতে নারাজ –আমার ধৈর্যর অভাব দেখে বলল আজ থাক আপনারা একটু বিশ্রাম করুন কাল কথা হবে। আমারও সময় হয়ে এসেছে ধ্যান করবার। –বিমান কেমন যেন চুপ করে গেল। আমারও কথা বলার ইচ্ছে ছিলোনা। লামা দেখলাম তেন্মাই কে ডেকে বলল এদেরকে খাওয়া ও শোবার ব্যবস্থা করে দাও। দেখো যেন কোন অসুবিধে না হয়। মাথা নাড়াল তেন্মাই। –কিছুই খাওয়া হল না। না হল বিমানের সাথে কথা, দুজন দুজনের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়লাম। –অর্পণ কটা বাজে বলতে পারবে ? –হ্যাঁ দাদা নিশ্চয়ই। এখন প্রায় সাড়ে তিনটে। কেন, কষ্ট হচ্ছে আপনার ? –না না এসো, ঘরে একটা জিনিস দেখাই –আমি চললাম দাদার পেছনে –ড্রয়ার খুলে একটা পুরনো ম্যানুস্ক্রিপ্ট বের করলেন –আমি তো থ ! এ কি দাদা, এটা কি ? –স্নেহাশীষ দা বলে উঠলেন রাজার শেষ উইল –কি বলছেন ? মানে তাতসুং রাজা না মানে বংশধর না চোর, না দাদা কিছুই যে মাথায় ঢুকছে না ! ঠপ করে ঠাণ্ডা মেঝেতে কেমন যেন বসে পড়লাম ! –স্নেহাশীষ দা আমার অবস্থা দেখে বলে উঠলেন তুমি নাকি গল্প লিখবে ? লেখক এরকম বসে পড়ে নাকি ? –না দাদা মানে ! আমি মানে মানে তেই আটকে রইলাম আর উনি বলতে শুরু করলেন – এটা শেষ লিক তাই ভাষায় লেখা সাংকেতিক কিছু শব্দ, যেটা আমি ওই তরবারির হাতলে পেয়েছিলাম প্রায় ওই ঘটনার দু বছর বাদে। এর মাঝে বিমান মারা গেল হটাৎ করে। যে লামা মনেস্টারিতে আমি গিয়েছিলাম সেটি ল্যান্ডসলাইডে ধ্বংস হয়ে গেল –আমার টনক নড়ল তারপর ? –এর মাঝে আমার জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটল যা ঘটার কথা নয় ! সে যাই হোক আমার বিশ্বাস দৃঢ় হতে থাকল যে তেনযিন মিথ্যে বলেনি। আমি তার পরের দিনই ওখান থেকে বিমানের সাথে লামার সাথে ঝগড়া করে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বোধ জ্ঞান যতোদিনে এলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তারপর আমি ওই তরবারি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করি, এবং খুঁজে পাই এইটি। সেখানেও বিপদ ! কিছুই মাথামুণ্ড বুঝতে পারছিনা, কাউকে বলতেও পারছিনা, অদ্ভুত প্রসব যন্ত্রণা। মনস্থির করে আবার চলে আসি এইখানে তাতসুং এর খোঁজ করতে। চালিয়ে যাই পড়াশুনা। নতুন ভাষা শেখা। কিন্তু বেশিদিন কেনইবা এরা আমাকে রাখবে, আমি তো এদের একজন নই। যথারীতি শুরু হল দলে ভাগ। এক দল বলে থাকুন, আর এক দল বেঁকে বসে বলে না। আমি পড়ি ফ্যাসাদে। ততদিনে তাতসুং এর ব্যাপারে একটাই খবর জানতে পারি যে ওকে মেরে ফেলা হয়েছে ! এবং ওর নাকি পুত্র সন্তানটিকেও কেউ তুলে নিয়ে গেছে বা মেরেই ফেলেছে। আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে গেল যে কিছু তো একটা নিশ্চয়ই আছে যার দরুন এতো অঘটন। এটা কাকতালীয় হতে পারেনা। রুমেন আমাকে ভালোবাসতে শুরু করে। ভালো মেয়েটি। কিন্তু যতই এ জাতি শান্ত হোক না কেন, বেজাতের কাউকে নিজেদের সম্প্রদায়ে জায়গা দিতে নারাজ এরাও। ডাকা হলো পঞ্চায়েত এদের মতন করে। আমাকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হল যে গ্রামে আর থাকা চলবে না। আর এখানে আসাও নয়, তাহলে আমার ভাষা শেখা ? তাতসুং, বিমান, লামা এদের সবার জীবনের জন্য দায়ী আমি থেকে যাবো ? মেনে নিতে পারলাম না। ওদের মতে বিয়ে সারলাম রুমেনের সাথে লুকিয়ে। বাড়িতে না হলো ঠাঁই, না হলো গ্রামে ! কিন্তু রুমেনের পরিবার আমাকে ফেলে দেয়নি কখনো। অনেক সাহায্য পেয়েছি। হাতে ধরে ওর বাবা আমাকে ভাষা ও অক্ষর চেনাতেন। রুমেনেরও হাত ছিল আমার শিক্ষার পেছনে। আয়ত্ত্বে আনলাম খামতি সম্প্রদায়ের লিক-তাই ভাষা। ততোদিনে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে চলে গেলো রুমেন ও আমার সদ্যজাত সন্তান। হাতে আমার কিছুই নেই শুধু তাতসুং এর দেওয়া অভিশাপ ! ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ওটা অভিশাপ না যন্ত্রণা, তাই রেখে দিলাম সাথে। বেশ কয়েক বছর এদিকে আর আসিনি। কলকাতায় একটা চাকরি করছিলাম। কিন্তু পাগলের পাগলামি কি আর সহজে যায় ভায়া ? –ছি এমন কেন বলছেন দাদা ? আপনি তো আর পাগল নন –না অর্পণ মার কাছে জানতে পারলাম যাকে এতদিন বাবা বলে জানতাম উনি আমার বাবা নয় ! –আমার মাকে উনি আশ্রয় দিয়েছিলেন। মা তখন অলরেডি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। প্রচুর প্রশ্নে জীবন জর্জরিত, কিন্তু সমাধানের পথ নেই ! আমি কে ? মাও, বাবা মারা যাবার পর কেমন একটা হয়ে গেলেন, শুধু বলতেন যা, আরও পাহাড়ে যা, এই পাহাড় আমার মৃত্যুর কাল, ছেলেটাকেও নিয়ে নেবে ও। কিছুই বুঝতাম না। মার তরফের আত্মীয় বলতে মামা। এক ভাই মায়ের। জিজ্ঞেস করলাম মামাকে, তুমি জানো কি আমার বাবা কে ? আর মা কেনই বা এসব বলছেন? মামার কাছে উত্তর পেয়েছিলাম একটাই "তোমার বাবা যদি বেঁচে থাকেন, বা আদৌ আছেন কিনা জানিনা, তবে থাকলে উনি বার্মা তে আছেন " –মানে !!!! আমি বার্মিজ !!!! –হুম মা ভারতীয় আর বাবা বার্মিজ। আর কিছু জিজ্ঞেস করো না। জানিনা, তবে এটা জেনে রাখো উচু বংশের তুমি তাই তোমার মা কে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। তোমার বাবার চিহ্ন একমাত্র তোমার রক্তে আছে। আর দেখো তোমার মায়ের লকারে একটা সোনার বাজুবন্ধন আছে তোমার বাবা মা আর তোমার নাম লেখা। –আমার তো প্রায় পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল মনে হলো। আকাশটাও আছে কিনা জানিনা ! ছুটলাম পরের দিন লকারে। দেখি সত্যি একটা বাজুবন্ধ এর মধ্যে লেখা তিনটে নাম " তাইমেন, তাতসু, আশা "। বুঝতে একটুও অসুবিধে হল না যে আশালতা আমার মায়ের নাম, মাঝে তার মানে যে নাম আছে সেটা আমার আর প্রথম নামটা হয়ত আমার বায়োলজিক্যাল ফাদারের। হুম হয়ত কেন, এটাই ঠিক। সঙ্গে একটা চিঠিও আছে। অচেনা ভাষায় লেখা নয় খুব চেনা আমার। ওটা খামতি ট্রিবাল ভাষা। সঙ্গে ছিল মায়ের হাতে লেখা একটা লাইন তোমার পিতৃ পরিচয়ের সাথে রেখে গেলাম বংশের অভিশাপ ! আমি যেন সব পেয়েও হারিয়ে ফেললাম অনেক কিছু ! মাথায় কিছু আসছিল না, আবার ফিরলাম পাহাড়ে। এবার শুধু তাতসুং কে খুঁজতে নয় নিজেকেও খুঁজতে। অদ্ভুত যন্ত্রণা নিয়ে ! একটাই ধ্যান জ্ঞান ছিল আমার লিক তাই স্ক্রিপ্টটা ভালো করে শেখা আর অভিশাপ খুঁজে বের করা। অনেক ম্যানুস্ক্রিপ্ট পেলাম, হটাৎ একদিন চোখে পড়ে রাজ বংশের ফ্যামিলি ট্রি। তাতে দেখি তাতসুং এর নাম আছে ও আমার বাবারও নাম আছে ! তাতসুং আমার ফ্যামিলি ট্রি টে বিলং করে। বসে পড়লাম আমি। –অর্পণ বলে উঠল দাদা আপনি কি তবে রাজবংশের কেউ ? –আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ওর বুঝতে একটুও অসুবিধে হলোনা আমার সন্মতির কথা। বসে পড়লো অর্পণ ঠিক আমার'ই মতন ! অজানাকে এই ভাবে পাবে হয়তো এতোটা ও ভাবেনি। হয়তো আমার'ই মতন অর্পণও এক্সপেক্ট করেনি এই ক্লাইমাক্স ! –দাদা কিছু মনে করবেন না একটা কথা জিজ্ঞেস করব ? –নিশ্চয়ই, করো –আপনার কি বিশ্বাস হয়েছিল ? –কি বিশ্বাস হবে না অর্পণ? আমি ওই ফ্যামিলির কিনা ? –হুম, দাদা –অবিশ্বাসের যায়গাটাই তো ছিল না। আমার মায়ের লকার এ পাওয়া বাজুবন্ধ, তার ওপর আমার মায়ের লেখা চিঠি। তার সাথে আমার পরিচয়, তার আগে ও পরের ঘটনা গুলো সবই তোমার জানা। তাই অবিশ্বাসের জায়গাটাই ছিলোনা যে অর্পণ। হ্যাঁ তবে কয়েকটা প্রশ্ন আমাকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছিল যে, তাতসুং আমার সৎ ভাই, সে আমার খবর জানল কি ভাবে ? তবে কি বাবা ততোদিন বেঁচে ছিলেন ? নাকি মা আমার বাবার আত্মীয়দের খবর দিয়েছিল আমার জন্মের ? –আমাকেই বা ও চিনল কি ভাবে ? আর তার থেকেও বড় কথা আমি যদি বমডিলায় না আসতাম তাহলে কি তরবারি আমার কাছে এসে পৌঁছাতো ! এতোগুলো ঘটনা তো কাকতালীয় হতে পারেনা, তার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন সম্বন্ধ আছে। –দাদা আমিও কিন্তু লিঙ্ক খুঁজে বেড়াচ্ছি –ওই জন্যই তো বলেছিলাম, নিজেকে নিজের খুঁজতে আসা ভাই। অর্পণ যদিও হাসলো কিন্তু পরিষ্কার বুঝতে পারলাম ও খুব টেন্সড –তাহলে কি দাদা আপনি আর কিছু লিঙ্ক-ই খুঁজে পাননি ? তাই কি বারে বারে এখানে আসেন ? কোনো কিছুই কি আর পাওয়া গেল না ? –দাঁড়াও দাঁড়াও এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে, হাঁফিয়ে উঠবে তো, একটু জিরিয়ে নাও। এক এক করে আমি বলছি সব উত্তর –না দাদা আসলে দমটা ঠিক মনে হচ্ছে গলার কাছে আটকিয়ে আছে, তাই এতো তাড়াহুড়ো করে আপনাকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম। –না না ইটস ওকে, বুঝেছি অর্পণ। তার পরেও আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু খোঁজ আমার শেষ এখনও হয়নি। আর জানিনা কবে হবে। বা আদৌ এই জীবনে শেষ হবে কিনা ! – কেন দাদা ? –কারণ পাহাড়ে ফিরে যখন এগুলো জানতে পারি, আমি ফিরে যাই আমার লোকেদের কাছে। গিয়ে আমার বাবার ইতিহাস ও আমার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করি। বয়স্ক যারা ছিলেন তারা সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে মেনে নিয়েছিলেন রাজার বংশধর হিসেবে। কিন্তু নতুন প্রজন্ম মানতে নারাজ। তবে এরা ট্রিবাল পিপল। ওহ্‌ সর‍্যি আমিও এরই অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বাস করলে পুরোটাই করবে নচেৎ একদম নয়। তাই পঞ্চায়েতের রায় সবাই মেনে নিয়েছিল। আমার তখন একটাই কাজ ছিলো তাতসুং এর ব্যাপারে, আমার বাবার ব্যাপারে ও অভিশাপের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া। সেটা আমি করতেও শুরু করলাম। করতে গিয়ে যেটা উঠে আসলো সে আরও ভয়ানক ! –কেমন দাদা ? আরও কি খারাপ হতে পারে ? –হুম সে তুমি ঠিকই বলেছ, আরও কি খারাপ হতে পারে ? হাসলাম আমি। তরবারির যেই অভিশাপের কথা বলা হয়েছে সেটা একদম ঠিক। রাজবংশের কেউ ওই তরবারি দিয়ে কোনো সিদ্ধ লামা কে হত্যা করেছিল এবং ওর মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল এক লিপি বা কিছু সাংকেতিক শব্দ যা দিয়ে কিছু রত্ন ভাণ্ডারের খোঁজ মিলবে। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মে হিংসা মানা, সেই থেকে ওটা অভিশাপ বহন করে আনছে। যার কাছে যাবে এবং বিশেষ করে রাজবংশ ছাড়া যে কেউই রাখবে তার মৃত্যু অনিবার্য। তাই রাজা কে মেরেও চোরের দল রাজপুত্র কে তুলে নিয়ে গিয়েও মারেনি। এবং সেটার কথাই কিন্তু আমাকে লামা বলেছিল। আমি শুনিনি। যাই হোক আমার মাথায় তখন একটাই কথা ঘুরছিল আমাকে তাতসুং পেলো কি করে ? অর্থাৎ আমি যে ওর ভাই, আমাদের বাবা যে এক ও জানলো কিভাবে ? আর জেনেও বলেনি কেন ? তাই খোঁজ চালাচ্ছিলাম তাতসুং এর ফ্যামিলির। খুঁজতে খুঁজতে ওর শাশুড়ির খোঁজ পাই। কিন্তু উনি খুবই অসুস্থ ছিলেন। তারপর মেয়েকে হারিয়ে, জামাইকে হারিয়ে উনি খুবই কষ্টে ছিলেন। সেখান থেকে জানতে পারি আমার এক ভাইপো এখনো বেঁচে আছে যে কোলকাতায় আছে। ঠিকানা নিতে ভুলিনি, এবং রেংমার (তাতসুং এর শাশুড়ি) থেকেই জানতে পারলাম বাবা আমার ছবি আমাদের কোলকাতার ঠিকানা সবই তাতসুং কে দিয়ে গিয়েছিল। বুঝলাম দৈবাৎ আমাকে কতোটা বঞ্চিত করেছে, মা আমার সব খবর দিতেন, শুধু বাঁচিয়ে রাখার জন্য আর ফেরেননি। –তাতসুং আমার খোঁজ নিয়েছিল মার থেকেই। কারণ বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। আর তাতসুং এর মা (মাতানরি) তাতসুং কে সব বলেছিল। ও কোলকাতা গিয়ে আমার খোঁজ নিয়ে এসেছিল, অথচ আমি এর কিছুই জানতে পারিনি। ও যেহেতু আমার থেকে ছোট ছিল তাই তরবারি লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল আমার কাছে। হয়ত মা রাজি হয়নি, আর বিমানের সাথে ওর এখানেই পরিচয় হয়েছিল। আমাদের দুজনের ছবি বিমান ওকে অনেকবার দেখিয়েছে। হি ওয়াজ ওয়েল অ্যাওয়ার অফ মাই নেচার অ্যান্ড মি। তাই যেচেই বিমানকে বলেছিল আমাকে রাখবে। মা কে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করবার আর ইচ্ছে হয়নি আমার তাতসুং এর সম্পর্ক। তবে জিজ্ঞেস করলেও উত্তর পেতাম না অর্পণ। কারণ মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। জীবনটা আমার কাছে শুধুই ধোঁয়া ছাড়া আর কিছুই নয় ! তবে আমিও তো ট্রিবাল পাগল তাও আবার শিক্ষিত, তাই জেদটাও বেশি। পাহাড় ছাড়লাম না, না ছাড়লাম তরবারি, মা মারা গেলেন। এর ফাঁকে ভাইপোর খোঁজটাও নিয়ে এলাম। কারণ আমার তো আর সন্তান নেই, তাই এই অভিশাপ ভাঙতে গেলে ওকে আমার লাগবে। কিন্তু পরিচয় দেইনি। তবে এটা নিশ্চিত দেরি করবো না। আমার জীবনেরও ভরসা নেই, অভিশাপ আর বৈতে দিতে পারিনা। আর যেই ধন রত্নের কথা বলা আছে সেটা দেখলাম বার্মাতেই পড়ে আছে। তাই ওটা নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করিনি। তবে যে মনাস্টারিতে এটা দিয়ে যাবো ওদেরকে বলে যাবো। ওদের কাজে লাগলে যদি অভিশাপ বংশ থেকে চলে যায়। –দাদা আমার সব যেন গুলিয়ে গেলো, ভালো লাগছে না। তবে চোরদের কথা তো কিছু বললেন না, বা তাতসুং কি ভাবে মারা গেল ? তাতসুং কে কি ডাকাতের দল মেরে দিয়েছে রত্নের লোভে ? –অর্পণ, ও আমার কাছে ওটা হ্যান্ড ওভার করে দিয়ে সেই রাতেই চলে যেতে গিয়েছিল। কিন্তু ওর বাড়ির চাকরটা জানতে পারে ও রাজবংশের। সেই'ই খবর দেয় ডাকাতদের রত্নের লোভে। কিন্তু তাতসুং বুঝতে পেরে আমাকে সরিয়ে দেয়। আর আমার নেশা এমন ছিল আপাং এর যে মরণ ঘুম। নাকি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ছিল সেটাও জানিনা ! তবে ছোট ছেলেটা সাথে ছিলোনা দেখে বেঁচে যায়। নিজের অভিশাপ আমাকে দিয়ে যেতে চেয়েছিল কিনা সেটা ঠিক জানিনা, তবে নিজেই অভিশাপের কবলে পড়লো। শেষ রক্ষা হল না। আমাকে দিয়ে গেল জীবনের যন্ত্রণা। অর্পণ আমার ইচ্ছে একটাই, তাতসুং এর ছেলের হাত দিয়ে কোনো মনেস্টারিতে ওটা দিয়ে দেবো। ওর যেন আর অমঙ্গল না হয়। আমার সাথে সাথেই যেন শেষ হয় বংশের অভিশাপ। তবে বলতেও ভালো লাগছে জানো– হি ইজ ভেরি উইটি। খুব ভালো ছেলে। জিজ্ঞেস করেছিল আমি কে ? ফোন নম্বর রেখে দিয়েছে, বলেছে এখানে আসলেই জানাবে। আমিও সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। তবে ক'দিন ধরে দেখছি আমার বাড়ির ওপর কেউ নজর রাখছে। জানিনা আমার শেষ কি ভাবে হবে ! অর্পণ একটা হেল্প করবে ভাই ? –বলুন দাদা, নিশ্চয়ই, এটা কি জিজ্ঞেস করতে হয় ? –না না তোমার ও তো সুবিধে অসুবিধে দেখতে হবে তাইনা ? তবে আমি এমন কিছু বলবো না যাতে তোমার অসুবিধে হয়। –আপনি বলুননা দাদা, আমি সব পারবো। –অর্পণ, আমার যদি কিছু হয়ে যায় –কি বলছেন দাদা ! –না না শোনো, হতেই পারে, এতে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। তবে যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এটা তাতসুং এর ছেলের ঠিকানা আর ফোন নম্বর, ওকে দিয়ে দিও। এতে একটা চিঠি থাকল সব লেখা আছে। –আমার হাতে একটা খাম – লেখা– টু, মিস্টার স্যামুএল, ৩-লিটিল লাউদন স্ট্রীট কোলকাতা ফোন নম্বর – ০৯৮৭৬৫৫৭৭৫৫ উইথ লাভ মিস্টার রয় ।।




    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.