>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • মৌ দাশগুপ্তা।

    SongSoptok | 8/10/2014 |

             

           বিস্মৃতির পাতা থেকে
                কবি চন্দ্রাবতীর রামায়ন



    আদিকাব্য রামায়ন পড়েনি এমন লোকের সংখ্যা বিরল এার বাংলা ওপার বাংলায় যে রামায়নের রমরমা তা মূলত কৃত্তিবাসি রামায়ন হলেও রামায়নের যে পালা ময়মনশাহীর বিলে-হাওরে নৌকার মাঝিরা কয়েক বছর যাবত গাইত, কলসী কাঁখে মেয়েরা গুণগুণ করত, পালা-পার্বনে, বিয়ে বা গায়ে-হলুদে রাত জেগে লোকে সাগ্রহে শুনতো তা কৃত্তিবাসের নয় তা ছিল চন্দ্রাবতীর রামায়ন এখন প্রশ্ন হল কে এই চন্দ্রাবতী? ময়মনসিংহ থেকে কেদারনাথ মজুমদার সম্পাদিতসৌরভপত্রিকায় (ফাল্গুন ১৩২০ বঙ্গাব্দ/ ফেব্রয়ারি ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ) ময়মনসিংহের কবি চন্দ্রকুমার দের প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধমহিলা কবি চন্দ্রাবতীতে প্রথম লিখিতভাবে চন্দ্রাবতীর নামোল্লেখ পাওয়া যায় চন্দ্রাবতী এবং তাঁর রচনাবলীকে লোকগাথার স্তূপ থেকে উদ্ধার করে কয়েকশ বছরের ধুলোবালি সরিয়ে আধুনিক কালের পাঠক সমাজের কাছে নিয়ে আসেন  মৈমনসিংহ গীতিকারসংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে- 

    সমকালিন বাংলা সাহিত্যে যেখানে নারী সাহিত্যিকের সংখ্যা হাতে গুনে বলে দেওয়া যাবে সেখানে কয়েকশত বছর পূর্বে এক অজপাড়াগাঁয়ে শক্তিমান এক নারী কবির উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর মহিলা কবি হিসেবে চন্দ্রাবতী প্রথম বাংলা ভাষায় রামায়ণ রচনা করেন . দীনেশ চন্দ্র সেন তাঁর সম্পাদিতপূর্ববঙ্গ গীতিকাচতুর্থ খন্ডে কবি চন্দ্রাবতী বিরচিত রামায়ণ প্রকাশ করেন রামায়ণ মূলত একটি পালাবদ্ধ গীত রামায়ণ ৩খন্ডে মোট ১৯টি অধ্যায়ে রচিত হয়েছে- প্রথম খন্ড, জন্মলীলা এখন্ডে রয়েছে ৮টি অধ্যায় দ্বিতীয় খন্ডের কোন নামকরণ করেননি চন্দ্রাবতী এই খন্ডের ২টি অধ্যায়ে যথাক্রমে সীতার বনবাস-পূর্ব জীবনের কাহিনী এবং বনবাসকালীন সময়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছেতৃতীয় খন্ডেরও কোন নামকরণ করেননি চন্দ্রাবতী এই খন্ডের ৯টি অধ্যায় যথাক্রমে- সীতার বনবাসের সূচনা, সীতার বিরুদ্ধে কুকুয়ার চক্রান্ত, রামের কাছে সীতার বিরুদ্ধে কুকুয়ার (বাংলাভাষায় রামায়ণের ভাবানুবাদ করেছেন চন্দ্রাবতী কুকুয়া নামে কৈকেয়ীর এক মেয়ের কথা লিখেছেন, মায়ের মতোই তার কুটিল স্বভাব) মিথ্যা অভিযোগ, রাম কর্তৃক সীতাকে বনবাসে পাঠানোর সিধান্ত, সীতার বনবাস, মুনি বাল্মীকির আশ্রয়ে সীতা কর্তৃক লব কুশের জন্মদান,সীতা-হনুমানের সাক্ষাৎ, রাম-হনুমানের সাক্ষাৎ এবং সীতার অগ্নিপরীক্ষা পাতাল-প্রবেশের বর্ণনা তিনি সীতার বনবাস পর্যন্ত লিখেছিলেন  অথচ এই অসমাপ্ত রামায়নই তাকে বাংলা সাহিত্যে অমর করে রেখেছে

    নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে রামায়ণ রচনা করে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূলে প্রথম কুঠারাঘাত করেন তিনি সেই অর্থে চন্দ্রাবতী আমাদের সাহিত্যের প্রথম নারীবাদী কবি বিষয়বস্তুর উপস্থাপনার গুণে চন্দ্রাবতীর এই রামায়ণ আমাদের চমকে দেয় কারণ, তাঁর রচনায় সীতা-চরিত্রটি প্রাধান্য পেয়ে মূখ্য চরিত্রে পরিণত হয়েছে যার পাশে রাম চরিত্রটি পুরোপুরি ম্লান সীতার মানসিকতাকে তিনি এক কালজয়ী চিন্তার আলোকে সুনিপুণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যেখানে নারী কেবল ব্যক্তি নয় ব্যক্তিত্ব! পুরাণের খোলস থেকে বের করে সীতাকে তিনি নবজন্ম রেজারেকশান দিয়েছেন সীতা এখানে দেবী নন, মানবী সীতা চরিত্র উপস্থাপনের এই নব-রীতি এবং নির্মানে আধুনিক ভাবনার মধ্য দিয়ে আমরা যে চন্দ্রাবতীকে পাই তিনি মূলতঃ নারীবাদের প্রবক্তা রামায়ণের নবতর রূপ-কল্পনা করতে গিয়ে তিনি নিজস্ব শিক্ষা এবং রুচি অনুসারে রামায়ণের চিরাচরিত বহু বিষয়কে যেমন বিমুক্ত করেছেন, তেমনি বহু নতুন বিষয়কে সংযুক্ত করেছেন ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা এবং জীবনাদর্শকে জারিত করে সেটিকে রামায়ণের গতানুগতিক ধারার সাথে সম্পৃক্ত করে তিনি সৃষ্টি করেছেন এক ব্যতিক্রমী রচনা যা প্রকৃত অর্থে রামায়ণের মোড়কে সীতায়ণ! সেই হিসেবে, চন্দ্রাবতীররামায়ণবাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ লোকমুখে প্রচারের ফলে চন্দ্রাবতীর ভাষারও পরিবর্তন ঘটেছে তবু তাঁর মূল রচনার স্বাদ পাওয়া যায় তাঁর রামায়ণে 

    এবার বলি চন্দ্রাবতীর কথা কবি চন্দ্রাবতীকে বলা হয়ে থাকে বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা কবি( অবশ্য . আহমদ শরীফের মতে চন্দ্রাবতী সম্ববত বাংলা ভাষায় দ্বিতীয় মহিলা কবি প্রথম কবি চৈতন্যদেবের কালের মাধবী আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন এক সময় সহজিয়া চন্ডীদাসের সাধনসঙ্গিনী রামীকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবির মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন ) কবিতার মাধ্যমে কবি চন্দ্রাবতী তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে

    `..ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়/বসতি যাদব কন্যা করেন তথায়/ভট্টাচার্য ঘরে জন্ম অঞ্জনা ঘরণী/ বাঁশের পালায় তাল পাতার ছাউনী/...চাল কড়ি যাহা পান আনি দেন ঘরে/বাড়াতে দরিদ্র জ্বালা কষ্টের কাহিনী/তার ঘরে জন্ম নিল চন্দ্রা অভাগিনী`

    চন্দ্রাবতীর বাবা দ্বিজ বংশীদাস ছিলেন রাঢ়ীয় ব্রাক্ষ্মণ তাঁদের কোনো এক পূর্বপুরুষ রাঢ় থেকে এসে ব্রক্ষ্মপুত্রের ধারে আবাস গড়েছিলেন বংশীদাস তাঁর মনসামঙ্গলে বলেছেনঃ
    বন্দ্যঘটি গাঁই গোত্রে রাঢ়ীর প্রধান।।
    রাঢ় হইতে আইলেন লৌহিত্যের পাশ
    যাদবানন্দের সুত দ্বিজ বংশীদাস
    পাঁচালীপ্রবন্ধে কথা করিলা প্রকাশ।।
    পরগণা দর্জ্জীবাজু পাটোয়ারী গ্রাম
    ফুলেশ্বরী নদীতটে বিরচিত ধাম।।
    (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন)

    নয়ানচাঁদ ঘোষ বিরচিত মৈয়মনসিংহ গীতিকার চন্দ্রাবতী নামক পালাটিই বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মধ্যযুগীয় মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর জীবনীর তথ্যভিত্তিক লিখিত প্রমান্য দলিল `চন্দ্রবতী` কোন সময়ে লেখা হয় জানা না গেলেও : দীণেশ চন্দ্র সেনের সূত্র মতে নয়নচাঁদ ঘোষ আনুমানিক ১৬৭৩ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন/নয়নচাঁদ ঘোষের আখ্যান-গ্রন্থনা প্রায় নিখুঁতসংক্ষিপ্ত পরিসরে অতি দরকারী বিষয়গুলি দিয়ে নাটকীয়ভাবে চন্দ্রাবতীর জীবনালেখ্য সাজানো হয়েছে চন্দ্রাবতী পালাটি ১২টি অধ্যায়ে শেষ হয়েছে প্রথম অধ্যায়ে ফুল-তোলা, দ্বিতীয় অদ্যায়ে প্রেমলিপি, তৃতীয় অধ্যায়ে পত্র দেওয়া, চতুর্থ অধ্যায়ে বংশীর শিবপূজা, কন্যার জন্য বরকামনা, পঞ্চম অধ্যায়ে চন্দ্রার নির্জনে পত্রপাট ষষ্ট অধ্যায়ে নীরবে হৃদয়দান, সপ্তম অধ্যায়ে বিবাহের প্রস্তাব সম্মতি, অষ্টম অধ্যায়ে বিবাহের আয়োজন নবম অধ্যায়ে মুসলমান কন্যার সঙ্গে জয়জন্দ্রের ভাব দশম অধ্যায়ে দুঃসংবাদ একাদশ অধ্যায়ে চন্দ্রার অবস্থা দ্বাদশ অধ্যায়ে শেষ

    পরমা সুন্দরী চন্দ্রাবতী যেমন কবি ছিলেন তেমনি ছিলেন রোমান্টিক মনের অধিকারিণী বাল্যকাল থেকে তিনি কবিতা রচনা করতেন তার রূপ গুণের খ্যাতি শুনে অনেক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি তার পানিগ্রহণে ইচ্ছুক ছিলেন কিন্তু চন্দ্রাবতীর মনের মানুষটি ছিলেন পার্শ্ববতী গ্রামের জয়ানন্দ নামক এক ব্রাহ্মণ যুবক চন্দ্রা জয়ানন্দের বিবাহের প্রস্তাব যখন পিতা বংশীদাসের নিকট এল তখন তিনি তাকে সম্মতি প্রদান করেন এবং বিবাহের যাবতীয় আয়োজনে মন দেন এদিকে ঘটে যায় আর এক ঘটনা স্থানীয় মুসলমান শাসনকর্তা বা কাজীর মেয়ে আসমানীর (মতান্তরে কমলার ) অসামান্য রূপে মুগ্ধ হয়ে যান জয়ানন্দ এই ত্রিকোন প্রেমের ফলাফল হয় মারাত্মক জয়ানন্দের সাথে চন্দ্রাবতীর প্রেমের কথা জেনেও আসমানী তার পিতাকে জানান তিনি জয়ানন্দকে বিবাহ করতে চান কাজী জয়ানন্দকে বলপূর্ববক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আসমানীর সঙ্গে তার বিবাহ দেন ঘটনাটি ঘটে যেদিন জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর বিবাহের দিন স্থির হয়েছিল সেই দিন , জয়ানন্দের এই হঠকারী আচরণ বিশাল এক আঘাত হয়ে আসে চন্দ্রাবতীর জন্য

     না কান্দে না হাসে চন্দ্রা নাহি বলে বাণী
    আছিল সুন্দরী কন্যা হইল পাষাণী আবার

    একদিকে অপমান, বিশ্বাসঘাতকতা, তার পরেও জয়ানন্দের প্রতি আকর্ষন, অপরদিকে নিজ চেতনার একান্ত গভীরে ধর্মনিষ্ঠা-পূজা-অর্চনা,এই মানসিক দোটানায় পড়ে গৃহদেবতা শিবসুন্দরকেই আঁকড়ে ধরলেন চন্দ্রাবতী
    স্নেহময় পিতার চরণে দুইটি প্রার্থনা জানালেন, প্রথমটি  নির্জন ফুলেশ্বরী তীরে শিবমন্দির স্থাপন, দ্বিতীয়টি তাঁর চিরকুমারী থাকবার বাসনা

    চন্দ্রবতী বলেপিতা সম বাক্য ধর
    জন্মে না করিব বিয়া রইব আইবর
    শিবপুজা করি আমি শিবপদে মতি
    দুঃখিনীর কথা রাখ কর অনুমতি
    অনুমতি দিয়া পিতা কয় কন্যার স্থানে
    শিবপুজা কর আর লেখ রামায়নে

    জয়ানন্দ পরে তার ভুল বুঝতে পেরে আত্মগ্লানিতে দিশেহারা হয়ে পাগলপ্রায় উদভ্রান্ত অবস্থায় চন্দ্রাবতীর মন্দিরের দ্বার দেশে উপস্থিত হন কিন্তু অভিমানিনী চন্দ্রা তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন হতভাগা জয়ানন্দ তখন মন্দিরের প্রাঙ্গণে সদ্যফোটা সন্ধ্যামালতী ফুলের রস নিংড়িয়ে মন্দিরের কপাটের উপর চার ছত্র কবিতা লিখে যান চন্দ্রাবতী পরে মন্দির খুলে কবিতা লেখা দেখতে পান এই কবিতা খানি ধুয়ে মুছে ফেলার জন্যে চন্দ্রাবতী নদীর ঘাটে জল আনতে গিয়ে দেখেন নদীর জলে ভেসে আছে প্রেমিক জয়ানন্দের মৃতদেহ ,নয়ানচাঁদ চন্দ্রাবতীর দুঃখের কাহিনী এভাবে শেষ করেনঃ

    স্বপ্নের হাসি স্বপ্নের কান্দন নয়ান চান্দে গায়
    নিজের অন্তরের দুষ্কু পরকে বুঝান দায়

    গবেষকদের মতে, নদীর ঘাটে মৃত অবস্থায় জলে জয়ানন্দের লাশ ভাসতে দেখে তীব্র অনুশোচনায় চন্দ্রাবতীও পরবর্তীতে ফুলেশ্বরী নদীর জলে ঝাঁপিয়ে জয়ানন্দের মত অনুগামী হন আবার কারো মতে, জয়ানন্দের জলে ডুবে আত্মহত্যা বা মৃত্যুর কিছুদিন পরপরই শোকাবিভূত চন্দ্রাবতী মর্মান্তিক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেনএতো গেল চন্দ্রাবতীর জীবন কাহিনী, আরেকবার নজর ফেরাই তাঁর রামায়নের দিকে

    জয়ানন্দের সাথে চন্দ্রাবতীর বিবাহের প্রস্তাব ভেঙ্গে যাবার পর কবি চন্দ্রাবতী আজীবন কুমারীত্ব থাকার ইচ্ছা নিয়ে রামায়ন কাব্য গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন কিন্তু রামায়নই বা কেন?  লোকশ্রুতি পিতা দ্বিজবংশী দাস চন্দ্রাবতীর মনকে অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য কন্যাকে রামায়ন কাব্য রচনা করতে আদেশ দেন আবার কেউ বলেন শৈশবে কবি চন্দ্রাবতী প্রতিবেশি ত্রিনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে এসে পয়ার ছন্দাকারে রামগানে আকৃষ্ট হয়েছিলেন তাহলেও প্রশ্ন জাগে সপ্তদশ শতাব্দীর সেই পুরুষতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বৃত্তে বসে চন্দ্রাবতী কেন সীতাকে উপজীব্য করে রামায়ণ রচনা করলেন? কেনই বা তিনি রাম চরিত্রের একনায়ত্বকে নস্যাৎ করলেন? আসলে চন্দ্রাবতীর এই বিপরীত ধর্মী ভাবনার মূলে কাজ করেছে তাঁর নিজস্ব জীবন অভিজ্ঞতা চন্দ্রাবতী অন্বেষণ করেছিলেন এমন এক চরিত্র যে চরিত্রের পাথেয় হয়ে উঠবে সীমাহীন দুঃখ সেক্ষেত্রে এই রকম নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ ভারাক্রান্ত চরিত্রের অভিধা একমাত্র সীতাই পেতে পারে আর আবাল্যের দোসর তথা প্রেমিক জয়ানন্দ পরিত্যক্তা চন্দ্রাবতীও ছিলেন সীতারই মতন দুঃখভাগিনী তাই দুঃখিনী চন্দ্রাবতী রাম পরিত্যক্তা জনমদুখিনী সীতার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে তুলেছিলেন নিজের জীবন অভিজ্ঞতা তথা জীবনাদর্শকে জারিত করে রামায়ণের গতানুগতিক ধারার মধ্যেই সংযুক্ত করলেন তাঁর ব্যতিক্রমী রচনা- রামায়ণের মোড়কে সীতায়ন

    এবার আবার ফিরে আসি চন্দ্রাবতীর রামায়ন প্রসঙ্গে যা বলছিলাম,সীতার বনবাস সম্বন্ধে কবি চন্দ্রাবতী রামায়ণে কুকুয়া চরিত্র সংযোজন করে একটি সুন্দর কাহিনীর অবতারণা করেছেন উদ্বৃতাংশ পাঠ করলেই বোঝা যাবে যেমন-
    উপকথা সীতারে গো শুনায় আলাপিনী
    হেনকালে আইল তথায় গো কুকুয়া ননদিনী
    কুকুয়া কইল, “বধু গো, মোর বাক্য ধর
    কিরূপে বঞ্চিলা তুমি গো রাবণের ঘর
    দেখি নাই রাইক্ষসরে গো শুইন্যা কাঁপে হিয়া
    দশমুন্ড রাবণ নাকি দেখাও গো, আঁকিয়া
    মূর্চ্ছিতা হইল সীতা গো রাবণ নাম শুনি
    কেহ বা বাতাস করে কেহ মুখে দেয় পানি
    সখিগণ কুকুয়ারে গো কত করিল বারণ
    অনুচিত কথা তুমি গো জিগাও কি কারণ
    রাজার আদেশ নাই গো জিগাইতে কুকথা
    তবে কেন ঠাকুরাণীর গো মনে দিলা ব্যাথা
    প্রবোধ না মানিল সেই গো কুকুয়া ননদিনী
    বার বার সীতারে গো বলয়ে সেই বাণী

    কৈকেয়ীকন্যা কুকুয়া মাতার ন্যায় রামচন্দ্রের সর্বনাশ কামনা করত তাই সে সীতাকে দিয়ে তাল পাতার পাখার উপর রাবণের প্রতিকৃতি অংকন করাল এবং তা সীতার উপর রেখে রামকে দেখিয়ে বললো, দেখ তোমার সীতা এখনো রাবণকে ভুলতে পারেনি ফলে তিনি সীতাকে নির্বাসন দিলেন বাংলাদেশের অন্য কোন কবির রচিত সেই রামায়ণে কুকুয়া নামের চরিত্র দেখা যায় না চন্দ্রাবতী কুকুয়ার ষড়যন্ত্রের বর্ণনা রামায়ণের দ্বিতীয় খন্ডের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন যা নিম্নরূপঃ

    বইস্যা আছিলেন রামচন্দ্র গো রতন সিংহাসনে
    উপনীত-হইল কুকুয়া গো শ্রীরামের স্থানে
    কালনাগিনী যেমন কইরা গো ছাড়য়ে নিশ্বাস
    দাণ্ডাইল দুষ্টা আইস্যা গো শ্রীরামের পাশ
    নয়নে আগুনি গো ঘন শ্বাস বহে
    তর্জিয়া গর্জিয়া তবে গো শ্রীরামেরে কহে
    শূন শুন দাদা, ওগো আমি কই যে তোমারে
    কইতে এই পাপের কথা গো মুখে বাক্য নাহি সরে
    সীতা ধ্যান সীতা জ্ঞান গো তোমার সীতা চিন্তামণি
    পরাণের অধিক দেখি গো তোমার জনকনন্দিনী
    বিশ্বাস না কর কথা গো তুমি না শুনিলা কানে
    অসতী নিলাজ সীতা গো ভজিল রাবণে

    কুকুয়া চরিত্র চন্দ্রাবতী কবির নতুন যোজনা, বলতে গেলে মৌলিক সৃষ্টি দেখা যায় চন্দ্রবতীর কবি প্রাণতো ছিলই বরং সৃজনশীল মনের সাহায্য তিনি তার রচনায় গভীর প্রেম এবং প্রাণের আশ্রয় নিয়েছেন তখনকার দিনে রামায়ণ নিয়ে অনেক রকমের গল্পও হয়ত প্রচলিত ছিল যা আসল রামায়নে পাওয়া যায় না সীতার বনবাস পর্যন্ত লেখার পর আর লেখা হয়নি জয়ানন্দের সাথে বিচ্ছেদের কারণে চন্দ্রাবতী রামায়নে আসলে একটি পালাবদ্ধ গীত বাল্মীকি রামায়ণের তুলনায় চন্দ্রাবতীর রামায়ণ কলেবরগত দিক থেকে অকিঞ্চিতকর বাল্মীকি রামায়ণের মতো কাহিনীগত বৈচিত্র, জটিলতা, বিস্তৃতি রামায়নে পাওয়া যাবে না বাল্মীকি রামায়নের মহাকাব্যক কলেবরগত বিশালতার কথা চিন্তা করলে দেখা যাবে এটি তিন খণ্ডে বিভক্ত যথা- সুন্দর কাণ্ড, যুদ্ধকাণ্ড উত্তরকাণ্ড এই তিনটি কাণ্ডই অসংখ্য সর্গে বিভক্ত সুন্দরকাণ্ডে আছে ৬৮টি সর্গ, যুদ্ধকাণ্ডে আছে ১২৮টি সর্গ এবং উত্তর কাণ্ডে আছে ১১১টি সর্গ অর্থ্যাৎ সর্বমোট তিনটি খণ্ডে মোট ৩০৭টি সর্গে বিন্যস্ত বাল্মীকি রামায়ণের বিশালতা সহজেই অনুভব করা যায় অপরদিকে চন্দ্রাবতীর রামায়ণ তিনটি খণ্ডে মোট ১৯টি অধ্যায়ে রচিত হয়েছে প্রথম খণ্ড হলো জন্মলীলা, এখণ্ডে মোট ৮টি অধ্যায় রয়েছে অধ্যায়গুলো হচ্ছে, প্রথম অধ্যায়ে লঙ্কা বর্ণনা যা নিম্নরূপঃ

    সাগরের পারে আছে গো , কণক ভুবন
    তাহাতে রাজত্বি করে গো, লঙ্কায় রাবণ
    বিশ্বকর্মা নির্মাইল সেইনা রাবণের পুরী
    বিচিত্র বর্ণনা পুরীর গো, কহিতে না পারি
    যোজন বিস্তার পুরী গো, দেখিতে সুন্দর
    বড়ো বড়ো ঘর যেমন পর্বত পাহাড়ে
    সাগরের তীর লঙ্কা গো, করে টলমল
    হীরামণ মাণিক্যিতে পুরী করে ঝলমল
    দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাবণের স্বর্গ জয়,

    তৃতীয় অধ্যায়ে রাবণ কর্তৃক মর্ত্ত্য পাতাল বিজয়, চতুর্থ অধ্যয়ে সীতার জন্মের পূর্বে সূচনা এবং মন্দোদরীর গর্ভসম্ভার ডিম্বপ্রসব, পঞ্চম অধ্যায়ে মাধব জালিয় সতা জাল্যানী, ষষ্ট অধ্যায়ে ডিম্ব নিয়ে জনক মহিষীর কাছে সতার গমন এই অধ্যায়ে সীতার জন্মের কাহিনী বিধৃত হয়েছে এভাবে-

    শুভদিন শুভক্ষণ গো, পূর্ণিত হইল
    ডিম্ব ফুটিয়া এক কন্যা ভূমিষ্ঠ হইল
    সর্ব সুলক্ষণা কন্যা গো, লক্ষ্মী স্বরূপিনী
    মিথিলা নগর জুইড়্যা গো, উইঠ্ল জয়ধ্বনি
    জয়াদি জোকার দেয় গো, কুলবালাগণ
    দেবের মন্দিরে বাদ্য গো, বাজে ঘনে ঘন
    স্বর্গে মর্ত্যে জয় জয় গো, সুর-নরগণে
    হইল লক্ষ্মীর জন্ম গো মিথিলা ভবনে
    সতার নামেতে কন্যার নাম রাখে গো, সীতা
    চন্দ্রাবতী কহে গো, কন্যা ভুবন বন্দিতা

    সপ্তম অধ্যায়ে রামের জন্মের পূর্ব সূচনা অষ্টম অধ্যায়ে রামের জন্ম, ভরত, লক্ষ্মণ শত্রুঘ্নর জন্ম এবং পরিশেষে কুকুয়ার জন্ম এইখানেই চন্দ্রাবতী রামায়ণের প্রথম খণ্ডের সমাপ্তি ঘটেছে জন্ম খণ্ড শেষ হয়েছেচন্দ্রাবতী রামায়ণের দ্বিতীয় খণ্ডের আলাদা কোনো নামকরণ করা হয় নি এই খণ্ডে সীতার কাহিনী প্রাধান্য লাভ করেছে এই খণ্ডে কবি জনক দুহিতা সীতার মুখে তাঁর কাহিনী বর্ণনা করিয়েছে এই খণ্ডে শেষ দুটি অধ্যায়ে বিভক্ত - প্রথম অধ্যায়ে বনবাস পূর্ববতী জীবনের কাহিনী এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে সীতার বনবাসের ঘটনায় পরিপূর্ণ

    চন্দ্রাবতীর রামায়ণের তৃতীয় খণ্ডটিও দ্বিতীয় খণ্ডের মতো নামকরণ বিহীন মোট নয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত প্রথম অধ্যায়ে সীতার বনবাসের পূর্ণ সূচনা, দ্বিতীয় অধ্যায়ে সীতার বিরুদ্ধে কুকুয়ার চক্রান্ত তৃতীয় অধ্যায়ে রামচন্দ্রের কাছে সীতার বিরুদ্ধে কুকুয়ার মিথ্যা অভিযোগ দায়েরচতুর্থ অধ্যায়ে রামচন্দ্রের সীতাকে পূর্ণবার বনবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত পঞ্চম অধ্যায়ে সীতার বনবাস, ষষ্ট অধ্যায়ে সীতাকে বাল্মীকি মুনির আশ্রয় দান লব-কুশের জন্ম, সমপ্তম অধ্যায়ে সীতার সঙ্গে হনুমানের সাক্ষ্য, অষ্টম অধ্যায়ে রামচন্দের সঙ্গে হনুমানের সাক্ষ্য , নবম অধ্যায়ে চন্দ্রাবতী রামায়ণ শেষ অধ্যায়ে সীতার অগ্নীপরীক্ষা পাতালে প্রবেশের বর্ণনা রয়েছে-

    দুই হস্ত জুড়ি সীতা গো, অগ্নি প্রণাম করিল
    ধীরে ধীরে অগ্নিকুন্ডে গো, সীতা প্রবেশিল
    সেইক্ষণে হইল কিবা গো, দৈবে অঘটন
    বসুমতী উঠিল কাঁইপ্যা গো, কাঁপিল অযোধ্যা ভুবন
    চিতা ফাইট্যা উঠিল গো, পাতাল গঙ্গা ভোগবতী
    তার সঙ্গে উইঠ্যা আইল গো মাতা বসুমতী
    বসুমতী কয়, ‘মাগো আইস আমার কোলে
    দুঃখিনী কন্যারে লয়্যা গো আমি যাইব পাতালে
    সুখে থাউক রাজা রাম গো রাইজ্য প্রজা লয়্যা
    আমার কন্যা সীতারে আমি গো লয়্যা যাই চলিয়া
    এই না কথা বইলা দেবী গো সীতারে লইল কোলে
    পাতালে প্রবেশিল সীতা গো দেখিল সগলে

    কবি চন্দ্রাবতী বাল্মীকি কিংবা কৃত্তিবাসের পথ পরিত্যাগ করে রাম কাহিনীকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্লেষণ করলেন চন্দ্রাবতীর এই রামায়ণ কাহিনিতে রাম নয় সীতাই হয়ে উঠলেন নায়িকা রামায়ন নয়, যেন রামায়নের আদলে লেখা সীতায়ন সীতার জন্ম কাহিনি দিয়ে শুরু করে, তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলিকে স্থান দিয়ে, তাঁর মানসিকতাকে সুনিপুণ ভাবে ব্যাখ্যা করে তাঁরই পাতাল প্রবেশ দিয়ে রামায়ণের ছেদ টেনেছেন কবি রামায়ণের এই নবতর রূপ কল্পনা করতে গিয়ে নিজস্ব শিক্ষা এবং রুচি অনুসারে কবি চন্দ্রাবতী রামায়ণের চিরাচরিত বহু বিষয়কে যেমন বিমুক্ত করেছেন, তেমনই নতুন বহু বিষয়কে সংযুক্ত করেছেন, নবনির্মিত বস্তু হিসেবে যার মূল্য অপরিসীম

    চন্দ্রাবতীর রামায়ণকে অনেকে দুর্বল এবং অসমাপ্ত বলে সরিয়ে রেখেছিলেন চন্দ্রাবতীর রামায়ণ পাঠে বিস্ময়াভূত নবনিতা দেব সেন বলেছেন যে, এটি দুর্বল বা অসমাপ্ত কোনোটিই নয় এটি একজন নারীর দ্বারা রচিত কাব্য যেখানে রামের গুণগান না করে তিনি সীতার দুঃখ দূর্দশার দিকটাই বেশি তুলে ধরেছিলেন যা তৎকালীন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধাচারণ হিসাবে দেখা হয়েছিল ফলে তিনি অন্য পালার জন্য খ্যাতি পেলেও রামায়ণ রচয়িতা হিসাবে গুরুত্ব পান নি দীনেশচন্দ্র সেন চন্দ্রাবতীর এই রামায়ণের সাথে মেঘনাদবধের আশ্চর্য মিল খুঁজে পেয়েছেন তাঁর ধারণা মেঘনাদবধ কাব্য রচনার আগে মাইকেল মধুসুদন দত্ত চন্দ্রাবতীর রামায়ন পড়েছেন এবং তারই প্রভাব পড়েছে মেঘনাদবধে তিনি তাঁর পূর্ববঙ্গ গীতিকায় মন্তব্য করেন যে, “এই রামায়ণের অনেকাংশের সঙ্গে মেঘনাদবধ কাব্যের আশ্চর্য্য রকমের ঐক্য দৃষ্ট হয়, আমার ধারণা, মাইকেল নিশ্চয়ই চন্দ্রাবতীর রামায়ন গান শুনিয়াছিলেন, এই গান পূর্ব্ববঙ্গের বহুস্থানে প্রচলিত ছিল এবং এখনও আছে

    অন্যদিকে সুকুমার সেন এই মতের বিরোধিতা করেছেন তাঁর মতে, ঘটনা উলটো এই গাথাটি প্রাচীন হলেও এর সংগ্রাহক বা সংস্কর্ত্তা মাইকেল পরবর্তী যুগের এবং এর কিছু অংশ মেঘনাদবধ কাব্য থেকে রূপান্তরিত তিনি তাঁর বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস বইতে লিখেছেন, “ছড়াটি যদিও আধুনিক না হয়, ইহার সংগ্রহীতা অথবা সংস্কর্ত্তা যে মধুসূদন দত্তের পরবর্ত্তী কালের লেখক তাহা দ্বিতীয় অংশের পঞ্চবটী বনবাসের সুখকাহিনীর বর্ণনায় পরিস্ফুট হইয়াছে নিম্নে উদ্ধৃত অংশটি মেঘনাদবধ চতুর্থ সর্গ হইতে রূপান্তরিত হইয়াছে মাত্র

    আমি কি গো জানি সখি কালসর্প বেশে
    এমনি করিয়া সীতায় ছলিবে রাক্ষসে।।
    প্রণাম করিণু আমি পড়িয়া ভূতলে
    উড়িয়া গরুড় পক্ষী সর্প যেমন গেলে।।
    রথেতে তুলিল মোরে দুষ্ট লঙ্কাপতি
    দেবগণে ডাকি কহি দুঃখের ভারতী।।
    অঙ্গের আভরণ খুলি মারিনু রাক্ষসে
    পর্ব্বতে মারিলে ঢিল কিবা যায় আসে।।
    কতক্ষণ পরে আমি হইলাম অচেতন
    এখনো স্মরিলে কথা হারাই চেতন।।

    দীনেশচন্দ্র সেন এর ধারণা সুকুমার সেনের কাছে বেশ বিস্ময় হয়ে এসেছিল কারণ তিনি লিখেছেন, “পরম বিস্ময়ের বিষয় এই যে, পূর্ব্ববঙ্গগীতিকার প্রবীণ বিচক্ষণ সম্পাদক মহাশয় বিশ্বাস করিয়াছেন যে, মধুসূদনই চন্দ্রাবতীর নিকট ঋণী! তিনি একাধিক স্থানে লিখিয়াছেন, ‘আমার ধারণা, মাইকেল নিশ্চয়ই চন্দ্রাবতীর গান শুনিয়াছেন’; ‘আমার বিশ্বাস মাইকেল মৈমনসিংহের কবির রামায়ণটি কোন স্থানে শুনিয়া মহিলা কবির দ্বারা প্রভাবান্বিত হইয়াছিলেনচন্দ্রাবতীর রামায়ণের এই অংশ আসলেই আধুনিক এর কিছু অংশ অন্যের হাতে পরিবর্তিত বা সংযোজিত হয়েছে বলেই সুকুমার সেনের ধারণা আবার দীনেশচন্দ্র সেন মহা উচ্ছ্বসিত এই রামায়ণ নিয়ে দুজনেই বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের বিশাল পণ্ডিত কার কথা বিশ্বাস করবো, বুঝতে কষ্ট হয় তবে পন্ডিতরা যে যাই বলুন আমাদের মত সাধারন পাঠক পাঠিকার দরবারে চন্দ্রাবতী তার সৃষ্টি উভয়েই অমর হয়ে আছেন থাকবেন




    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.