>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • কথা কবিতা

    SongSoptok | 6/10/2014 |




    বিজয়ের মাসঃ ফিরে দেখা (১ম পর্ব) 

    নয় মাসের পথ পেরিয়ে বিজয় এসেছে বাংলার শ্যামল আঁচলে রক্ত রাঙা হয়ে। পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে সার্বভৌম দেশ হিসেবে। হাজার বছরের পুরনো বাংলাদেশ। এ দেশের ইতিহাস চিরকালের দুঃখের ইতিহাস। জীবনানন্দ দাশ এ দেশের সব কিছুতেই নীল রঙ খুঁজে পেয়েছেন। নীল বাংলা, নীল জ্যোৎস্না, নীল চাঁদ কত কী। এ দেশকে পান্ডববর্জিত দেশ হিসেবে কেউ কেউ অভিহিত করেছেন। গাঙেয় উপত্যকার এই দেশকে জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর বলেছেন বর্বরদের দেশ, আর্যরা বলেছে অসুর আর পক্ষীর দেশ। তারপর পরেও পশ্চিমবঙ্গের পান্ডুর রাজার ঢিবি, হরিনারায়ণপুর, বেরাচম্পা, দেগঙ্গায় কিংবদন্তীর চন্দ্রকেতুর গড় প্রভৃতি উৎখননে পাওয়া গেছে তিন হাজার বছর আগের প্রাচীন সভ্যতা। যা আর্য আগমনেরও আগের কথা ।

    আজ আমরা ভৌগলিক, ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে যে জনগোষ্ঠীকে বাঙালি এবং যে ভূখন্ডকে বাঙলা বা বাঙলাদেশ বলে জানি তা আধুনিক কালের। প্রাচীনকালে এই দেশে একক নামের ও অভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের কোন পরিচয় মেলে না,অঙ্গ,বঙ্গ কলিঙ্গ, পুন্ড্র, সুহ্ম ইত্যাদি নামে জনপদ ছিল। এগুলো গোত্র বা গাঁই দ্বারা শাসিত হত। মনে করা হয় ব্যক্তির নামে অঞ্চলের নামকরণ হয়েছে। প্রথমে ঐতরেয় আরণ্যক (আনুঃ খ্রীঃ পূঃ পাঁচ শতক) গ্রন্থে বঙ্গাঃ এবং পরে পাণিনির অষ্টাধ্যায়ীর পতঞ্জলীর ভাষ্যে গৌড়াঃ, রাঢ়াঃ প্রভৃতি গোত্রীয় সমাজের উল্লেখ পাওয়া যায়। উত্তর ভারতের পভোসায় প্রাপ্ত গুহালিপিতে বঙ্গপাল নামের রাজার উল্লেখ রয়েছে। মানসোল্লাস গ্রন্থে গৌড়বঙ্গাল নাম মেলে। হাজার বছরের পুরোনো চর্যাগীতিতে বঙ্গাল , বঙ্গাল দেশ এর উল্লেখ আছে।

    মহাভারতে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সুহ্ম রাজারা ছিল কুরুক্ষেত্রের কুরুদের পক্ষে। কালিদাসে রঘুবংশে নৌযুদ্ধে নিপুন ও সাহসী বাঙালিদের রঘু পরাস্ত করেছিলেন বলে বর্ণিত হয়েছে। এতে বুঝা যায়,বাঙালির রাজনীতির ইতিহাসও বেশ পুরোনো।

    বাঙলা কখনো একক শাসকের অধীনে পরিচালিত বা শাসিত হয় নি। জৈন বৌদ্ধ শ্রাবক,শ্রমণ ভিক্ষুরাই প্রথম গৌড়ে রাঢ়ে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে আগমন করে। এদের মাধ্যমেই উত্তর ভারতীয় জীবন পদ্ধতি ও সভ্যতার সাথে এদেশীয়দের পরিচয় ঘটে। পুর্বাঞ্চলীয় কিছু কিছু ব্রাহ্মণ্যবাদী নানা কাজে এদেশে এলেও ফিরে যেয়ে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে। কারণ এটা ছিল অচ্ছুৎদের দেশ। বল্লালী সেনের কৌলীন্য চেতনা থেকেই এর প্রমান পাওয়া যায়। মৌর্য আমলে এ আর্যায়ন হয়তো গৌড়, রাঢ়,এবং পুন্ড্রে সীমিত ছিল। গুপ্ত যুগের সাম্রাজ্য কলিঙ্গ, সুহ্ম, বঙ্গ, সমতট উড়িষ্যা, আসাম অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল।যদিও শিশুনাগ, মৌর্য, গুপ্ত পাল সেন --- কোন শাসনই সমগ্র বঙ্গে চালু ছিল না ।বখতিয়ার খলজি জয় করেন লাখনৌতি গৌড় । গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি ও পরবর্তী শাসকগণ বঙ্গ কামরূপ জয়ে প্রয়াসী ছিলেন।

    বঙ্গ নামের পরিবর্তে বঙ্গালা ব্যবহৃত হয় ইবনে বতুতার বৃত্তান্তে। জিয়াউদ্দীন বরনী বঙ্গালা শব্দটি বঙ্গ অর্থে ব্যবহার করেছেন। শামসউদ্দীন ইলিয়াস শাহ স্বয়ং শাহ-ই-বঙ্গালা নাম গ্রহণ করে ১৩৩৮ সনে গৌড় সিংহাসনে বসেন। মুঘল আমলে এর নাম হয় সুবাহ-ই- বাঙ্গালা। ব্রিটিশ আমলে যা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি নামে পরিচিত ছিল। তবু উনিশ শতক পর্যন্ত গৌড় ও বঙ্গ নামে দু ভাবে নির্দেশিত হত এই বৃহৎ অঞ্চল।

    মোটামুটিভাবে -----
    গৌড় বলতে বুঝায় ------- রাজশাহী, মালদহ, রাজমহল, মুর্শিদাবাদ
    রাঢ় ---- বর্ধমান বিভাগ,সুহ্ম, প্রেসিডেন্সি বিভাগ
    পুন্ড্র -বরেন্দ্র------- বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, কোচবিহার, মিথিলা
    বঙ্গ --- ঢাকা, ময়মনসিংহ, পাবনা
    সমতট --- কুমিল্লা, নোয়াখালি, হরিখেল, চট্টগ্রাম, পার্বত্য ত্রিপুরা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম।
    বঙ্গাল ----- সোমদ্বীপ, সন্দীপ, বাকলা (বরিশাল) ।

    বাঙালির নৃতাত্তিক পরিচয় আরো জটিল। আজো এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হয় নি। তবু মোটামুটিভাবে বলা যায় নেগ্রিটো, ভেড্ডি,( অষ্ট্রিক) মোঙ্গলীয় নরগোষ্ঠীরই মিশ্রণ ঘটেছে বেশি। শতকরা ৬০ ভাগ অষ্ট্রিক, ২০ ভাক মোঙ্গলীয় ,১৫ ভাগ নেগ্রিটো, আর ৫ ভাগ অন্যান্য নরগোষ্ঠীর রক্ত মিশেছে বলে অনুমান করা হয়।

    বাঙালির রক্তসাঙ্কর্যের কারণে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মিথ্যাকথন, ভীরুতা, মামলা-প্রিয়তা, প্রবঞ্চনা, কর্মকুণ্ঠ অথচ ভোগী, চৌর্যবৃত্তি, সুযোগসন্ধান, তদবিরপ্রবণতা, আত্মসম্মানবোধের অভাব পরিলক্ষিত হয়। কর্মকুন্ঠার কারণে জীবিকার ক্ষেত্রে এরা দেবানুগ্রহী। সম্রাট বাবর তার আত্মচরিতে লিখেছেন,-- বাঙালি 'পদ' কেই শ্রদ্ধা করে । তারা বলে, আমরা তখতের প্রতি বিশ্বস্ত।যিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন আমরা তারই আনুগত্য স্বীকার করি।

    আজ যে আমরা বাঙলা ভাষায় কথা বলি তা অনার্য ভাষাপ্রসূত নয়। এটাও উত্তরভারত হয়ে আসা আর্য ভাষা। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে ককেশীয় অঞ্চল থেকে একদল ভ্রাম্যমান মানুষ যাদের ইতিহাসে আর্য বলা হয় তারা ধর্মীয় গ্রন্থ বেদ সংগে নিয়ে ইরান হয়ে উত্তর ভারতে আসে। সেই ভাষাই কালে ক্রমে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাষাকে বলা হয় ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা। এ ভাষাই পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষাগুলো এই ভাষার বংশধর। বাংলাও তাই। ডঃ শহীদুল্লাহ বলেছেন, একমাত্র মুন্ডা ভাষা ছাড়া বাংলা ভাষায় অনার্যের প্রভাব নাই বললেই চলে।

    মানুষের স্বজাত্যবোধ, পারস্পরিক সহমর্মিতা গড়ে উঠে একক বন্ধনে, এক শাসনে এক আদর্শে পরিচালিত হলে। বাঙালির জাতীয় জীবন সে পরিবেশে তেমন প্রতিপালিত হয় নি। তাই শাস্ত্র, রীতি-নীতি, বিশ্বাস, সংস্কার রুচি প্রভৃতির ক্ষেত্রে অভিন্ন সত্ত্বা গড়ে উঠতে পারে নি। তা ছাড়া বর্ণে ও বিত্তে বিন্যস্ত সমাজে এক অঞ্চলের লোকও সমস্বার্থে ও সমমর্যাদায় আত্মিক ও আর্থিক ঐক্য অনুভবের সুযোগ কখনো পায় নি।মাঠে, ঘাটে,বাটে তারা সর্বক্ষণ একত্রিত হয়েছে, কিন্ত মিলিত হয়নি কখনো। শ্রম ও পণ্য বিনিময় করেছে কিন্ত মন দেয়া-নেয়া করেনি। তাদের পরস্পরের নাম জানা ছিল, মুখ চেনা ছিল কিন্ত সহানুভূতি ও প্রীতিপ্রসুত যে হৃদ্যতা ও আত্মীয়তা তা স্বশ্রেণী বহির্ভূত মানুষের সাথে গড়ে উঠেনি। সেজন্য জীবনের, চিন্তার, কর্মের, স্বার্থের ও অনুভূতির কোন ক্ষেত্রেই আমরা বাঙালি নির্বিশেষের সহমর্মিতা বা সমমর্মিতা দেখি নে । সবটাই শ্রেণীর, দলের, সম্প্রদায়ের বা অঞ্চলের ছাপযুক্ত। সবটাই খন্ড ও ক্ষুদ্রের প্রতীক, সবটাই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ইংগিতবাহী।আজকের দিনেও উচ্চবিত্তের মানুষের এ মনোভাব বিলুপ্ত হয় নি। আজো শিক্ষিত ও শাসকেরা, বেনে ও বুর্জোয়ারা দেশ বলতে দেশের মানুষ বলতে নিজেদেরই বুঝেন, সমাজে সরকারে নাগরিক দায়িত্ব ও অধিকার বলতে, নাগরিকের প্রয়োজনীয় স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্পদ বলতে তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সামগ্রীই বুঝেন।আমজনতা তাদের কাছে গৃহগত হাতিয়ার ও প্রাণীর মত।

    বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসঃ 

    বাংলাদেশ চিরকালই ছিল বিজাতি বিজিত দেশ। মৌর্য- গুপ্ত- পাল-সেন শাসনকালের সময়সীমা শুরু থেকে ১২ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মৌর্যরা মাগধী এবং বৌদ্ধ। গুপ্ত এবং সেনরা ব্রাহ্মণ্যবাদী। গুপ্তরা এসেছে উত্তর বিহারসংলগ্ন উত্তরপ্রদেশ থেকে। আর সেনরা ছিলেন ক্ষত্রিয়, দাক্ষিণাত্যের লোক । পাল বংশের প্রথম রাজা গোপালকে জনগণ ক্ষমতায় বসালেও তারা বাঙালি কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কিন্ত এই শাসকদের কেউই পুরো বাংলাকে শাসনাধিকারে আনতে পারে নি।

    এরপর শুরু হয় তুর্কো-পাঠান- মুঘল আমল। এর সময় সীমা ১২০৪ থেকে ১৭৫৭ খ্রীঃ পর্যন্ত। এ সময়েও কিছু কিছু আঞ্চলিক রাজা স্বাধীন ভাবে বাংলার কিছু অংশ অধিকারে রেখেছিলেন। এদের মধ্যে বার ভুঁইয়াদের নাম উল্লেখযোগ্য।মোঘলরা প্রথমে সুবেদার দিয়ে বাংলা শাসন করেন। পরে এ দেশে দিল্লিকে নির্দিষ্ট কর প্রদানের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নবাবী প্রথা চালু হয়। এ প্রথার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলী খান।

    ১৭৫৭ সন থেকে বৃটিশ আমল শুরু। বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটে ১৯৪৭ সনে। বৃটিশরা ১৯০৫ সালে বাংলাকে ভেঙ্গে দুই টুকরো করে ।পরবর্তী সময়ে বঙ্গভঙ্গ রহিত করা হলেও বাংলার কাঠামো আগের অবস্থানে ফিরে আসে নি। এরপর দ্বিজাতির তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ খন্ডিত হলে বাংলাও দ্বিখন্ডিত হয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের পেটের মধ্যে ঢুকে। এখানে শুরু হয় আরেক প্রহসন, বাংলার পশ্চিম অংশ ভারতের সাথে যুক্ত হলেও পূর্ব অংশ পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত ছিল না ,ভারতের পশ্চিমে পাকিস্তানের অন্য চারটি প্রদেশ, মাঝখানে স্বাধীন সার্বভৌম ভারত। পুর্ব প্রান্তে বিচ্ছিন্ন বাংলার একটা অংশ যার নাম ১৯৫৪ সনের আগ পর্যন্ত ছিল ইস্ট বেঙ্গল,পরে এর নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান। পাকিস্তান আমল শুরু হয় ১৯৪৭ থেকে । এর সমাপ্তি ঘটে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ এ। ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সন থেকে বাংলাদেশ নামে বাংলার একটি অংশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায়।


    বাংলাদেশ চিরকালের সংগ্রামের দেশ। এদেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে সুবিধা ভোগী মানুষের বিরুদ্ধে, প্রবঞ্চক দেবতার বিরুদ্ধে, বৈরি প্রকৃতির বিরুদ্ধে। প্রাচীন ও মধ্যযুগে সামন্ত রাজের বিরুদ্ধে করেছে প্রতীকী সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম বৃটিশ আমলে এসে প্রথম দিকে খন্ড খন্ড বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহে রূপ নিয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, সিপাহি বিদ্রোহ,ফকির বিদ্রোহ ও নীলচাষীদের বিদ্রোহ। এ গুলো সুসংগঠিত রাজনৈতিক দিক থেকে পরিচালিত না হলেও গণমানুষের বিক্ষোভ এতে ধরা পড়েছে।পরবর্তী সময়ে এই বিক্ষোভ তরঙ্গাভিঘাত হয়ে ছড়িয়ে পড়লো বাংলার আনাচে কানাচে।

    প্রথম ঘটনা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন (১৯০৫-১৯১১)লর্ড কার্জনের অশুভ সংকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলো বঙ্গদেশে। বঙ্গভঙ্গ রোধে সারা দেশে সন্ত্রাসবাদী স্বদেশি আন্দোলন শুরু হল। ১৯০৮ সালে মজ;ফরপুর হত্যাকান্ড উপলক্ষে প্রফুল্ল চাকীর আত্মহত্যা ও ক্ষুদিরামের প্রাণদন্ড এই অগ্নিযুগের দুটি উজ্জ্বল নিদর্শন। ১৯১৪ সালে শুরু হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের সুযোগে বিদেশের সহযোগিতার, তাদের অস্ত্রের সাহায্যে দেশকে স্বাধীন করার এক গোপন প্রয়াস চলে । কিন্ত ১৯১৫ সালে বাঘা যতীনের পরাজয় সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সমাপ্তি টেনে দিল।

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মানুষের গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম বলে প্রচার করা হয়েছিল। গান্ধীজীর মত নেতা ইংরেজদের জন্য ভারতবর্ষ থেকে সৈন্য সংগ্রহে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। কারণ তাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ভারতবর্ষ এই যুদ্ধে ইংরেজদের সহযোগিতা করলে তাকে স্বরাজ দেয়া হবে। কিন্ত যুদ্ধের শেষে সমস্ত আশা দুরাশায় পরিণত হল। স্বরাজের পরিবর্তে পাওয়া গেল ১৯১৯ সালে মন্টেগু চেমসফোর্ডের সংস্কার পরিকল্পনা। এর দ্বারা ভারতের প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্ব শাসন দেয়া হল বটে, কিন্ত বাংলাদেশের উপর দু;সহ অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হল। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির অন্য প্রদেশে যেয়ে চাকরি সংগ্রহের পথ সংকুচিত হল। সেই সময় এল দমন নীতিমূলক আইন রাউলাট এ্যাক্ট। এই আইনের প্রচলনের প্রচেষ্টা দেশব্যাপী বিক্ষোভ জাগিয়ে তুললো। এর মধ্যেই ঘটলো জালিয়ানওয়ালাবাগে অমানুষিক নরহত্যালীলা । আরম্ভ হল গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলন ( ১৯২০)।

    অন্যদিকে ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সাফল্য আর মার্ক্সবাদের প্রভাবে শিক্ষিত বাঙালির যুব মানসে নতুন প্রত্যয়ের আভাস এনে দিল। ১৯১৯ সাল থেকেই মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে সাম্যবাদ প্রসারলাভ করে ।দেশের মধ্যে ক্রমশ সাম্যবাদী ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা দানা বাঁধতে থাকে এর ফলে ১৯২৭/২৮ সালের মধ্যেই কম্যুনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। কংগ্রেস আর মুসলিম লীগ ছিলো বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি। কম্যুনিস্ট পার্টিই সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলার ইতিহাসে জনগণের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে চাইলেও এর নেতৃবৃন্দ মার্ক্সীয় তত্ত্বকে দর্শন থেকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন নাই।

    ভারত বিভক্তি কালে বাংলাদেশের মাথায় আবার খড়গ নেমে এলো। একদিকে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভাবেও বাংলা বিভক্তি যেন অনিবার্য হয়ে উঠলো। প্রাকৃতিক নিয়মেই পশ্চিম বঙ্গ হিন্দু জনগোষ্ঠী প্রধান, আর পুর্ববঙ্গ মুসলমান প্রধান। বৃটিশদের অবর্তমানে ভারতের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ কে করবে ? কংগ্রেস না মুসলিম লীগ ? নাকি যৌথভাবে ? এই প্রশ্নের সমাধান যেমন হয়েছে ভারত বিভক্তির মধ্য দিয়ে,তেমনি বাঙালি নেতৃবৃন্দের চরিত্রহীনতা, আর ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বসতি বিন্যাসের কারণে বাংলা ইতিহাসের ধারায় বিভক্ত হয়ে দুটি ভিন্ন শাসকের অধীনে চলে গেল।

    পাকিস্তানীদের শোষণের প্রয়োজন ছিলা না, মানচিত্রই বলে দিয়েছে পাকিস্তানের ঝুলন্ত অংশ একদিন খসে পড়বে। এটা বুঝতে পেরেই পাকিরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলদেশকে শোষণের পাশাপাশি নিগড়ে বাঁধার চেষ্টা করেছে। পাকিস্তানের শোষণ আর শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও বাঙালি নেতৃবৃন্দ চারিত্রিক ত্রুটির কারণেই যেমন দলের আদর্শ বা চরিত্রের আদর্শ ধরে রাখতে পারে নাই, তেমনি দেশের স্বার্থে অন্যদলের সাথেও সমঝোতামূলক সহাবস্থান তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নাই। যার ফলে জনযুদ্ধের সময়ও তারা দেশের স্বার্থে নয়, ব্যক্তিবোধের হীন স্বার্থের কারণেই মুক্তিযোদ্ধারা দুই আদর্শের ভিত্তিতে দুই শিবিরে বিভক্ত ছিল। একদলের স্যালুট নিত শেখ ফজলুল হক মনি। অন্যদলের জেনারেল ওসমানি। এদের এক দলকে সমর্থন করতো বি এস এফ অন্য দলকে সাপোর্ট করতো র। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ঐ সময়েই স্বাধীনতা যুদ্ধকে নস্যাৎ করে দেয়ার অপশক্তি হিসেবে খন্দকার মুশতাক আহমদের অপতৎপরতা। এ রকম একটা সংকটময় ও জটিল অবস্থা মোকাবেলা করে দেশের স্বাধীনতাকে যারা ছিনিয়ে এনেছেন তারা হলেন সে সময়ের চার নেতৃবৃন্দ। অথচ বাঙালির ইতিহাসে আজ এদের নাম বিস্মৃত

    বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নাম মুক্তিযুদ্ধ নয়। এটা জনযুদ্ধ। জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। মুক্তিবাহি্নীর সদস্য সংখ্যা ছিল দুই লাখ চল্লিশ হাজার । এগুলো বিভক্ত ছিল কয়েকটা ভাগে। যেমন, আঞ্চলিক বাহিনী, মুক্তিবাহিনী,মুজিব বাহিনী, মিত্র বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা শিবির। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার, ই,পি,আর বারো হাজার । ছাব্বিশ শত পুলিশ মারা গেছে। প্রতি সেক্টরে ট্রেনিং দেয়া হত চল্লিশ হাজার। আশি হাজার লোকের তালিকা আছে, সশস্ত্র যোদ্ধা কত ছিল তা আজো তা কেউ জানে না, জানার বা জানানোর বা খোঁজার কেউ প্রয়োজন মনে করে না ।এর মধ্যে ঢুকে গেছে অনেক সুবিধাবাদীর দল। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে --- এই ভেবে যারা দেশ স্বাধীনের পর পরই মুক্তি যুদ্ধের সনদ সংগ্রহ করেছিল এমন নকল মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আজ একেবারে নগন্য নয়।

    এই মুক্তিযোদ্ধারাই বা কয়জন দেশের স্বার্থে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল ? যদি পরিসংখ্যান করা যায় তাহলে দেখা যাবে , আমাদের দেশের রাজনীতির অঙ্গন শিক্ষিত মানুষের পাশাপাশি বিরাট একটা অংশ দখল করে করে আছে অশিক্ষিত, বখাটে, বিপথগামী, অপরাধী, মায়ে খেদানো বাপে তাড়ানো যুব সমাজ। তাই সেদিন সত্যিকারে যুদ্ধের উদ্দেশে অনেকে অংশগ্রহণ করলেও কিছু মানুষ গেছে বিভিন্ন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। জীবন থেকে পলায়ন মনোভাব আবেগপ্রবণ রোমান্টিক বাঙালি জাতির মৌল বৈশিষ্ট্য। এক শ্রেণী যুদ্ধে অংশগ্রহণের নামে জীবন থেকে পলায়ন করেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী গেছে কয়দিন নিশ্চিন্তে খাবারের অভাব থেকে মুক্তি পেতে। কেউ গেছে যুদ্ধের নামে অস্ত্রলাভ করে গ্রামে ফিরে এসে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। অল্পবয়সীরা গেছে আবেগের প্রাবল্যে। কিছু মুক্তিযোদ্ধা আছে যাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা উচ্ছৃংখলতার নামান্তর। কিছু লোক ভাবতো দেশ স্বাধীন হলে হয়ত আর কোন প্রচলিত নিয়ম মানতে হবে না। সেদিন অনেক যুবক পরিবারের দলীয় আদর্শকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের খাতায় নাম লিখিয়েছে। তাই পরিবারের একজন মুক্তিযোদ্ধার সনদ মানেই সে পরিবারের সকল সদস্যের চারিত্রিক সনদপত্র নয় । তা নয় বলেই পরবর্তী সময়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ভাই, আত্মীয়-স্বজন যুদ্ধাপরাধী আর রাজাকারমিশ্রণে তৈরি অবৈধ দলে নাম লিখাতে পেরেছে। আদর্শ যদি জীবনের মূলমন্ত্র হতো তাহলে কখনোই কোন উদ্দেশ্যেই সে আদর্শ মানুষ জলাঞ্জলি দিতে পারতো না । অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে যাদের একবেলা আহারের সংস্থান নেই, কিন্ত এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আছে যাদের একটি সনদ পরিবারের ভেদবুদ্ধি আর হীনস্বার্থে আত্মতুষ্টি, আত্ম অহংকার,আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির সহায়ক। সে সনদ দেশের নয়, বৈষয়িক সমৃদ্ধির অমোঘ অস্ত্র ।

    আজ দেশের অনেক মানুষ বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা ভাষা দিবসে রাজনীতির ইতিহাস বর্ণনা করার মাধ্যমে বিজয় অর্জন, স্বাধীনতা প্রাপ্তি বা ভাষা অধিকারকে মূল্যায়নের নামে আত্মপ্রসাদ লাভ করে। এদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ঘটনা মাত্র, চেতনা নয়।


    ( পরবর্তী সংখ্যায় )
    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.