>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • মৌ দাশগুপ্তা

    SongSoptok | 5/15/2015 |




    বাঙালীর ঝালে ঝোলে অম্বলে রবিঠাকুর। সদ্য গুনগুনাতে শিখলে, পাড়ার জলসায় গান গেয়ে সংস্কৃতিমনস্ক হতে হলে,প্রেমে পড়লে, ,হাফসোল খেলে, পূজা প্রার্থনায়,একা থাকার সময়… সেই রবি ঠাকুরই ভরসা। আমাদের হাতে খড়ির পর অ আ ক খ শেখা থেকে শুরু করে প্রেমপত্র লেখা অবধি সর্বত্র রবিঠাকুরের অবাধ অক্ষরগত উপস্থিতি।রবি ঠাকুর আমার কাছে বিস্ময়ের এক অতল, অগাধ, খনিভান্ডার। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৫টি। এর মধ্যে রয়েছে বনফুল, কবি কাহিনী, ভানুসিংহের পদাবলী, শৈশব সঙ্গীত, এবং রুদ্রচণ্ড এর মতো আলোচিত বই। আর ও আছে গান ও কাব্যনাটক বাদ দিয়ে ৬৫টি কবিতার বই। রবীন্দ্রনাথের প্রথম বই ‘কবি কাহিনী’ প্রকাশিত হয় কবির অজান্তে ১৮৭৮ সালের ৫ নভেম্বর। ছোটগল্প ১১৯টি। নাটক ৫০টি। ভ্রমণকাহিনী ৯টি। শিশুসাহিত্যের বই ৯টি। প্রবন্ধ-আলোচনা-ভাষণের বই ২০টি। এবং চিঠিপত্র কয়েক হাজার। এ সকল সৃষ্টির পাশাপাশি তিনি এঁকেছেন ২ হাজারের মতো ছবি। একটা মানুষ অন্যের প্রকাশিত রচনা কপি করে গেলেও সারাজীবনভর এতটা কপি করতে পারবে কিনা সন্দেহ। এবার অপ্রাসঙ্গিকভাবেই বলি, ভানুসিংহ ঠাকুর যে রবীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম ছিল সেটা অনেকেরই জানা। তাঁর আরো কয়েকটি ছদ্মনাম ছিল, যেমন, দিকশূন্য ভট্টাচার্য, অপ্রকটচন্দ্র ভাস্কর, আন্নাকালী পাকড়াশি।

    আমার কাছে রবিঠাকুর প্রথম ধরা দেন আমার মায়ের গান আর কবিতার মধ্য দিয়ে।এমনকি আমাদের দু’বোনের কাগজ-কলমে ব্যাবহৃত “ভালো নাম”এও রবিঠাকুরের ছোঁয়া। সেই ছোট্টবলায় বুঝতে শেখার, এখনও মনে পড়ার বয়স থেকে আজ অবধি আমার মায়ের গুনগুনানি মানেই রবি ঠাকুরের গান।মা খুব ভালো আবৃত্তিও করেন, কিন্তু সেও সেই রবীন্দ্রনাথ। সঞ্চয়িতা কি কথা কাহিনী , জ্ঞানত মাকে বই খুলে দেখে আবৃত্তি করতে দেখিনি। স্কুলে নীচু ক্লাসে অ্যানুয়াল ফাংশানের আগে মা ঘরের কাজ সারতে সারতে কি সেলাই ফোঁড়াইয়ের ফাঁকে মুখে মুখে শেখাতেন, “বীরপুরুষ”, “সন্ধ্যাপ্রদীপ”, “দিদি”, আজও সেগুলো পরিস্কার মনে আছে। পড়তে লিখতে শেখার প্রথমধাপে মায়ের হাত ধরেই তো সহজপাঠ, তাই খুব ছোটবেলা থেকেই আমার কাছে রবিঠাকুর মানেই আমার মায়ের ছোঁয়া লাগা, এক ভালোবাসার, এক ভালো লাগার স্মৃতি।রবিঠাকুর কে ঘিরে আমার মত শিশুবেলার স্মৃতি অনেকেরই তো আছে। তাই আজ রবীন্দ্রনাথের শিশুপাঠ্য কিছু রচনা নিয়ে ফিরে যাওয়া … ফিরে দেখা…

    শিশুমন বড্ড চঞ্চল- হরিন শিশুর মত। শিশুদের জগত হলো আলাদা ও বৈচিত্রময়। তাদের চিন্তা- ভাবনা, তাদের খেলাধুলা, তাদের খেয়ালখুশি,তাদের স্বার্থহীন, আপন পর বোধহীন  নিষ্পাপ নির্মল জগতটাই আমাদের বড়দের জগত থেকে এক্কেবারে  আলাদা। রবিঠাকুর কিন্তু অক্লেশে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন এই জগতে ঘুরে বেড়াবার। তাই তো কি সহজে তিনি শিশুমনের ভাবনাকে  তাঁর গল্পে, কবিতায়, গানে স্পষ্টরূপ দিতে পেরেছিলেন। ‘অতিথি’, ‘ছুটি’, ‘বলাই’, ‘সমাপ্তি’ ও ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’,  এ পাঁচটি গল্পের শিশু একেক রকম। শিশুদের তিনি কীভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছেন, কী করে জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দেখেছেন তা গল্পগুলো পড়লেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।শিশুমনকে স্বচ্ছ সরল অনুভূতিতে ছুঁতে পেরেছিলেন বলেই কত সহজেই না  তিনি বলতে পেরেছিলেন-

    “মেঘের কোলে রোদ হেসেছে
    বাদল গাছে ছুটি
    আজ আমাদের ছূটি ও ভাই
    আজ আমাদের ছূটি।”

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্য অনেক গানেও শিশুদের জন্য আছে অনন্য ভান্ডার, যেমন মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, হারে রে রে রে রে, আমরা সবাই রাজা, আমাদের ক্ষেপিয়ে বেড়ায়, আমাদের ভয় কাহারে, আজ ধানের ক্ষেতে, ও জোনাকি কী সুখে …তবে কিনা এখন ওঁনার গল্প কি গানের কথা থাক,  আমি বলতে চাইছি রবিঠাকুরের শিশুদের জন্যে লেখা কবিতার কথা… বীরপুরুষ' কবিতা পড়েন নি এমন ক'জন বাঙালী আছেন বলুন তো?  মায়ের কি দাদু , ঠাকুমা, দিদিমার বলা গল্পের রাজপুত্র, গল্পের পঙ্খীরাজ ঘোড়া, রাক্ষস, ডাকাত , সব কিছু শিশু মনকে আন্দোলিত করে তোলে। এসব কল্প কাহিনী শিশুমনে সজীব হয়ে ওঠে।

    “হাতে লাঠি, মাথায় ঝাকড়া চুল
    কানে তাদের গোঁজা জবা ফুল
    আমি বলি দাঁড়া, খবরদার
    এই চেয়ে দেখ আমার তলোয়ার।”

    এই বীরপুরুষ কবিতাতেই ছোট্ট খোকা  রূপকথার রাজপুত্র হয়ে মাকে নিয়ে চলে তেপান্তরের মাঠে।মায়ের রক্ষাকর্তা হয়ে।খোকার বীরত্ব শক্তিতে নয়, ভক্তিতে পরিপূর্ণ। মাকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করার মধ্যে যে তৃপ্তি, যে আনন্দ তা খোকার সংলাপে উপচে পড়েছে।

    মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে
    মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে
    তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে
    দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে
    আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে
    টগবগিয়ে তোমার পাশে, পাশে।
    (বীরপুরুষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

    শুনতে শুনতে জলছবির মত চরিত্রগুলো, তাদের পারিপার্শ্বিকতা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কি সহজ সরল ভাষা,অথচ তাল ছন্দ পুরোপুরি মজুত।আজো বহুপঠিত এই কবিতাটি মনে রাখার , ভালো লাগার কারন  সেই সাবলীল শব্দচ্ছটা এবং ছন্দের দোলা। আর মনে পড়ে ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান’। ১৮৮৪ সালে কবি লিখেছিলেন শিশুদের জন্য প্রথম কবিতা। “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান।” ‘এই ছড়াটা যেন শৈশবের মেঘদূত’।

    স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, রবীন্দ্রনাথই বাংলা সাহিত্যের বাতাবরণে ব্রাত্যসমাজ থেকে কুলিনসমাজে ছড়াকে তুলে আনেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জবানীতে বলেন, ‘ছেলে ভুলানো ছড়ার মধ্যে আমি যে রসাস্বাদ করি ছেলেবেলাকার স্মৃতি হইতে তাহাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব’। রবীন্দ্রনাথের শিশুদের জন্য লেখা ছড়া- কবিতাগুলো মুলতঃ পরিণত বয়সে এসে কবির নিজের শৈশবকে ফিরে দেখা,( ‘ছবি ও গান’ ‘কড়ি ও কোমল’, ‘শিশু ’,শিশু ভোলানাথ )। যে কোন মানুষের শৈশবস্মৃতির সাথেই ‘মা ’শব্দটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্ক প্রশ্নাতীত। রবিঠাকুরের মা সারদাসুন্দরী দেবী যখন মারা যান তখন কবি চোদ্দ বছরের কিশোরমাত্র। বহু সন্তানবতী মা বিরাট একান্নবর্তী পরিবারের সর্বময়ী কত্রী হয়ে তাঁর কনিষ্ঠ সন্তানটিকে কতটা সময় দিতে পারতেন সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়, তবে মায়ের স্নেহ ,মায়ের ভালোবাসা,মায়ের হাসি, মায়ের আদর বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে কবির শিশুপাঠ্য কবিতার মধ্যে। শিশুর কাছে মা যেমন সত্যি, – তেমনি প্রকৃতির ফুল, ফল, জল, আকাশের চাঁদ, মেঘ, নক্ষত্র তেমনি সত্যি। মায়ের হাসির সাথে চাঁদের হাসি তাই কবির কলমে একাকার হয়ে যায়।

     “মা আমাদের হাসে যখন
    ঐ জানালার ফাঁকে
    তখন তুমি বলবে কি মা
    অনেক দূরে থাকে।”

    রবিঠাকুর তাঁর রচনার মধ্যে কখনো কখনো নিজের শৈশব-কৈশোরের অবদমিত ইচ্ছে-স্বপ্ন-কল্পনাগুলোকে মেলে ধরেছেন। 'শিশু'; 'শিশু ভোলানাথ'; 'খাপছাড়া' প্রভৃতিতে সেই কারনেই বোধহয় উত্তম পুরুষের লেখা।। তাঁর এসব কাব্যের ভাবে ও ভাষায় রয়েছে শিশুর সারল্য, নির্মল আনন্দ রসের ধারা, কল্পনার মায়াজাল, নিবেদিত প্রাণের বিনম্রতা, প্রেমময় চিত্তের আকুতি। তবে ’হারিয়ে যাওয়া’,’ সন্ধ্যাপ্রদীপ’ কিংবা ‘দিদি’র মত কিছু কবিতা কিন্তু আবার তৃতীয় পুরুষের দৃষ্টিতে লিখেছেন…

    আমি যদি দুষ্টুমি করে চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি
    ভোরের বেলা মাগো ডালের পর কচিপাতায় করি লুটোপুটি
    তবে তুমি আমার কাছে হারো
    তখন কি মা চিনতে আমায় পারো?
    তুমি ডাকো খোকা কোথায় ওরে;
    আমি শুধু হাসি চুপটি করে। (লুকোচুরি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

    ছড়া বা কবিতায় ‘মা’ অনুষঙ্গ সম্ভবত রবীন্দ্রনাথই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। মা সন্তানের মধুর সম্পর্কের বিভিন্ন দিক কবির কলমে বিভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে। শিশুসন্তানটি যে মায়ের বুকের ধন। তাই মা গর্ব করেই বলেন —'তোমার শাসন আমরা মানি নে গো/ শাসন করা তারেই সাজে/ সোহাগ করে যে গো।' মায়ের কাছে সন্তান স্নেহ, আকুতি শিশু মনের কল্পনা প্রবনতা যেন তাঁর কবিতায় মুর্ত হয়ে উঠেছে।
    “আমি তাকে শাসন করি
    বুকেতে বেঁধে
    আমি তাকে কাঁদাই সে গো
    আপনি কেঁদে”

    মায়ের কাছে শিশু, শিশুর কাছে মা- একান্ত করে পাওয়া রক্তের কণাতে কণাতে জড়িত এক অনুভব …

    “গান গেয়ে তোরে নাচাই ঘরে
    আপনি হৃদয় মাঝে হাজির তবে।”

    আবার ছো্ট শিশুর খামখেয়ালীপনাভরা চিরন্তন প্রশ্নও  কখনো কবির কলমে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে,  যেমন,— 'এলেম আমি কোথা থেকে/ কোনখানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে ।' মায়ের সেই ছল করে ঘুরিয়ে উত্তরে  বলা—' ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।'

    নিয়ম করে পড়তে খোকার বড় বিরক্তি, তার চেয়ে ভালো মিছেমিছি পড়া-পড়া খেলা। পাঠশালার বন্দি জীবন তার ভালো লাগে না। সে চায় অবাধ স্বাধীনতা, খোলামেলা বন্ধন হীন জীবন- সেখানে থাকবে না কোন বাঁধা নিষেধ, সেখানে থাকবে শুধু উন্মুক্ততা, থাকবে খোলা আকাশ, বাতাশ, আর প্রকৃতির ছন্দময় উচ্ছৃখলতা। সে জন্য শিশু তার মাকে বলে –

    “ মাগো আমার ছুটি দিতে বল
    কাল থেকে পড়ছি যে মেলা
    এখন আমি তোমার ঘরে বসে
    করব শুধু পড়া পড়া খেলা।”

    মা কেবল মুখ টিপে হাসেন। পাঠশালায় যাবার পথে ফেরিওয়ালা,বাগানের মালী,পাগড়ি পরা পাহারওলা দেখে খোকারও সাধ জাগে অমনি করে ফেরি করতে, বাগানের মালীর মতো ধুলো মাখতে, কখনো বা পাহারাদার হয়ে গলির ধারে রাত জাগতে ইচ্ছে করে। শিশু মনের ভাবনা চিন্তা মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে উড়ে চলে।

    আমি যখন পাঠশাতে যাই
    আমাদের এইবাড়ির গলি দিয়ে
    দশটা বেলায় রোজ দেখতে পাই
    ফেরিওয়ালা যাচ্ছে ফেরি নিয়ে।”
    …………………………………
    ………………………………..
    ইচ্ছে করে সেলেট ফেলে দিয়ে
    এমটি করে বেড়াই নিয়ে ফেরি।”

    কখনো বা শিশুমন উড়ে চলে যায় অন্য দিগন্তে খেয়াঘাটের ধারে। খেয়া নৌকা দেখে। মাঝি নৌকা নিয়ে এপার ওপার করে তখন সে চেয়ে থাকে সেদিকে। এ নিয়ে শিশুর মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার ইচ্ছে হয় খেয়া ঘাটের মাঝি হতে। তাই সে বলে-

    মা যদি হও রাজি
    বড় হয়ে আমি হব
    খেয়া ঘাটের মাঝি…

    এই শিশুই আবার বর্ষারদিনে মনের আনন্দে কাগজের নৌকা জলে ভাসিয়ে হাততালি দিয়ে বলে –

    “যদি সে নৌকা আর কোনো দেশে
    আর কারো হাতে পড়ে শিয়ে শেক্ষে
    আমার লিখন পড়িয়া তখন
    বুঝবে সে অনুমানি
    কার কাছ হতে ভেসে এল স্রোতে
    কাগজের নৌকাখানি-।”

    কখনো বা শিশুমনে ছায়া ফেলে মায়ের মুখে শোনা রূপকথা, রামায়নের কাহিনী। অবুঝমনের খোকা নিজেকে এক করে ফেলে সে কাহিনীর কুশীলবদের সাথে, রামের মত সেও কল্পনায় চায় লক্ষ্মণের মতো ভাইকে নিয়ে বনবাসে যেতে। তাই মাকে তার অনুরোধ—'বড়ো হব, তখন আমি /পড়ব প্রথম পাঠ—/আজ বলো মা, কোথায় আছে/ তেপান্তরের মাঠ।'

    এত সব কল্পনা, এত সব চাওয়াচাওয়ির ফাঁকেও রবিরারের ছুটির দিনটা খোকার  বড় প্রিয়। শিশুমনের এই ছোটখাটো চাহিদাটাও কিন্তু কবির নজর এড়াতে পারে না।

    সোম মঙ্গল বুধ এরা সব
    আসে তাড়াতাড়ি
    এদের ঘরে আছে বুঝি
    মস্ত হাওয়া গাড়ি?
    রবিবার সে কেন মাগো,
    এমন দেরী করে?
    ধীরে ধীরে পৌঁছায় সে
    সকল বারের পরে
    আকাশ পাড়ে তার বাড়িটি
    দূর কি সবার চেয়ে?
    সে বুঝি, মা তোমার মতো
    গরীব ঘরের মেয়ে
    (রবিবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)


    শিশু সে তো নিষ্পাপ নিলিপ্ত তার কোন স্বার্থ বোঝে না, কোন হিংসা বোঝে না। শিশুর আচরনে, চরিত্রে স্বভাবে তাদের কর্মকান্ডে আমরা সেটাই তো দেখি। সে তার আশেপাশে যা দেখে তাকেই নকল করে বড় হয়ে উঠতে চায়। কখনো মা কে নকল করে তো কখনো বাবাকে। দাদা কি দিদি থেকে পাঠশালার পন্ডিতমশাই কি কানাইমাস্টার, কেউ সে লিস্ট থেকে বাদ পড়েন না। 

    “আমি আজ কানাই মাস্টার
    পড়ো মোর বিড়াল ছানাটি
    আমি ওকে মারি নে বেত
    মিছি মিছি বসি নিয়ে কাঠি।”

    এই খোকাই আবার ছোট বোনটির কাছে হয়ে ওঠে বিজ্ঞ বড়দাদা। খুকিকে পড়াতে বসিয়ে ভয় দেখিয়ে আর শাসন করে সে বেশ মজা পায়। মাকে এসে বলে 'তোমার খুকি কিচ্ছু বোঝে না মা/ তোমার খুকি ভারি ছেলেমানুষ।' আবার এই খোকাই কখনো ভাবে যে সে  তার বাবার মতো বড় হবে, ছোট ভাইটিকে 'তুমি ভারি দুষ্টু ছেলে' বলে বকে দেবে, গুরুমশায় বকলে বলবে 'খোকা তো আর নেই/ হয়েছি যে বাবার মতো বড়ো।' বাবা কিন্তু খোকার কাছে তুলনামূলক দুরের মানুষ, মায়ের মত কোলে চড়ে বসে অন্যায় আবদার করার মত নয়। সারাদিনই ভারী কাজ যে বাবার। আর এই কাজের জন্যই বাবার সব চেয়ে বড় সমালোচক খোকা। তাই সে মাকে ডেকে বলে 'বাবা নাকি বই লেখে সব নিজে/ কিছুই বোঝা যায় না লেখেন কী যে' । খোকার সরল কথা বাবার লেখায় কিচ্ছু নেই। নেই রাজা,রাজপুত্তুর, নেই মজার গপ্প। শিশুর পরিচিত জগত্ সে লেখায় খুঁজে পায় না বলেই সে সবই কেবল কাগজ নষ্ট করা কাজ। শিশু এমনিভাবে তার চোখে দেখা, কানে শোনা, পারিপার্শ্বিকতার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এবং মায়ের কোল, বাবার স্নেহ, তার সে একমাত্র সহায় তা উপলদ্ধি করতে পারে। শিশুর সবচেয়ে বড় বন্ধু, বড় খেলার সাথী, বড় আশ্রয়স্থল হলো তার গর্ভধারনী মা। তাই সে মায়ের কোলকে পৃথিবীর নিরাপদতম আশ্রয় মনে করে।  শিশু যখন মাকে ডেকে সাড়া না পায় তখন বলে,-

    “মা যে আমার ঘরে
    বসে আছে চেয়ে আমার তরে,
    তারে ছেড়ে থাকবো কেমন করে।”

    ‘পূজার সাজ' কবিতায় ধনী আর গরিবের ঘরে পূজার আয়োজনের যে ব্যবধান তা কবিকে ব্যথিত করেছে। শিশু বড়ই অবুঝ। ওরা বোঝে না পিতার সামর্থ। ওদেরও ইচ্ছে করে জরির টুপি, ফুলকাটা সাটিনের জামা গায়ে দিতে। এ কবিতায় বিধু বোঝে তারা গরিব, কিন্তু তার ভাই মধুর বোঝার বয়স হয় নি। সে বোঝে না 'ছেঁড়া ধুতি আপনার ঢের বেশি দাম তার/ ভিক্ষা করা সাটিনের চেয়ে'।  একইভাবে আরেকটি চরিত্র এঁকেছেন,“অপূর্বর মা”। আবার এই কবির কলমেই 'বিদায়' কবিতাটিতে,’সন্ধ্যাপ্রদীপে’,  নিহিত রয়েছে এক বেদনা মিশ্রিত করুণ ছবি।

    শিশুদের জগত অন্যরকম। শিশুর মত নিষ্পাপ মন ছাড়া সে জগতে ঢোকার চাবিকাঠি পাওয়া মুস্কিল। আমরা পরিণত বয়সের ষঢ়রিপু আশ্রিত খোলা চোখে দেখি, তাই হয়ত অনুভব করতে পারি না। কিন্তু বিশ্বকবি ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি অন্তর দৃষ্টি দিয়ে এদের কে প্রত্যক্ষ করতে পারতেন। তাই তো তিনি অনায়াসে উচ্চারণ করে গেছেন

     —  বাল্য দিয়ে যে-জীবনের/আরম্ভ হয় দিন/ বাল্যে আবার হোক-না তাহা সারা।

    রবি ঠাকুর আপনার, আমার, আমাদের সবার । তিনি আমাদের বিশ্বকবি, কবিগুরু । তিনি এক বিস্ময়কর প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যা রবীন্দ্র প্রতিভায় সমৃদ্ধ হয়নি।  অনন্য সাধারন রবীন্দ্রনাথের সবকিছু অসাধারন। তাই তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে কিছু বলতে যাওয়ার অর্থই হলো জ্ঞান সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে শুধু নুড়ি পাথর তোলা, আজকের আলোচনার ইতি টানার আগে তাই মনে মনে স্মরণ করি  রবিঠাকুরের  'শিশু' কাব্যের শেষ কবিতা 'আশীর্বাদ' যেখানে কবি এ বিশ্বের সবচেয়ে নির্মল প্রাণ শিশুদের উদ্দেশ্যে আশীর্বচন উচ্চারণ করেছেন:

    ধরায় উঠেছে ফুটি শুভ্র প্রাণগুলি
    নন্দনের এনেছে সম্বাদ,
    ইহাদের করো আশীর্বাদ।... ... ...


    [মৌ দাশগুপ্ত]
    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.