সংশপ্তক: অধিকাংশ বাঙালিরই
রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রথম পরিচয় সহজ পাঠের পাতায়! তারপর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে
তাঁর সাথে প্রথম আলাপ যার যার নিজস্ব পরিসরে এক এক রকম ভাবে গড়ে ওঠে। আপনার
ক্ষেত্রে সেই প্রথম আলাপ গড়ে ওঠার গল্পটা যদি একটু বলেন আমাদের!
জয়া: আমার সচেতন স্মৃতি অনেক পরে। তবে অচেতনে
মায়ের মুখ থেকে তাঁর গান শুনে। আমার মত সব বাঙ্গালিরই বুঝি রবীন্দ্রনাথের কাছে
গানে খড়ি হয়। তার পর সহজ পাঠের হাতেখড়ি।
সংশপ্তক: একটু গভীর ভাবে দেখলে আমরা দেখতে পাই, আমাদের যার যার জীবনে
শৈশবের রবীন্দ্রনাথ কৈশরের রবীন্দ্রনাথ যৌবনের রবীন্দ্রনাথ আসলেই ক্রমশ প্রকাশ্য
রবীন্দ্রনাথের একটা ধারাবাহিক পর্বই! আমরা যার জন্যে ঠিক প্রস্তুত থাকি না, অথচ এই
ধারাবাহিক ভাবেই কবি যেন আমাদেরকেই প্রস্তুত করে তোলেন আমাদের জীবনের পূর্ণ
উদ্বোধনের জন্যেই! আপনার ব্যক্তি জীবনের গড়ে ওঠার পর্বে রবীন্দ্রনাথ কিভাবে প্রভাব
বিস্তার করেছিলেন সেই গল্পটা যদি বলেন।
জয়া: হাট বসেছে শুক্রবারে/ বক্সী গঞ্জে পদ্মাপারে... আসলে সহজ
পাঠ আমাদের সময়ে খুব ভালবেসে পড়াতেন বাড়ির গুরুজনেরা। আমার ব্যাপারটি একটু বাড়তি
ছিল। তিন বছর বয়স থেকেই আমি পারফর্মার। কথাটা কেন বললাম জানো? আসলে গরমের ছুটিতে
যখন মামাবাড়ি যেতাম তখনই ঘর ভর্তি নিজের, পরের মামা মাসীরা আমাকে একটি জলচৌকির ওপর
বসিয়ে দিতেন। আর সবাই গোল হয়ে ঘিরে ধরে আমাকে বলতেন – শোনা তো জয়া সেইসব সহজ পাঠে
কি কি পড়িস তুই। আমার স্পষ্ট মনে আছে, একদিন ঘাড় দুলিয়ে সেই সব বলতে বলতে যেই
বলেছি- গৌর হাতে ঐ কৌটো কেন?/ কৌটো ভরে মৌরী রাখি/ মৌরী খেতে ভালোবাসি ... বলা
শুরু করতেই আমার দিদিমা কোথা থেকে একটা মৌরীর কৌটো হাতে ধরিয়ে বলেছিল- এই বার করো
তো সোনা। ...তো এই আমার শৈশবের তিনি। কৈশোরে মূলতঃ দিদির সঙ্গে গানের লড়াই খেলার
সময় মার গলায় শোনা গানই গেয়ে ফেলা। তাছাড়া মোটামুটি সব উপন্যাস গল্পগুচ্ছও তখনকার
সময়েই পড়া। উপন্যাসের মধ্যে আমার মনে আছে গোরা আমার মনে দাগ কেটেছিল খুব। যদিও
কিছু বুঝেছিলাম এমন দাবী মোটেই করব না। কিন্তু সুচরিতা গোরা আর তৃতীয় একটি পুরুষ
চরিত্র সম্ভবত বিনয় নাম ছিল... ত্রিমুখী টানাপোড়েন আমার কাছে তখন নতুন কিছু। আর
ঠিক সেই সময়েই ক্লাস নাইনে ন হন্যতের মিরচা এলিয়াদ একদিকে আর অন্যদিকে যোগাযোগের
কুমুদিনী আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখত। কুমুদিনীর থেকে আমি আজও বের হতে পারি নি। কিন্তু
তাঁর উপন্যাস আমি আর পরে পড়তে চাই নি। সত্যি কথাটা হলো সেগুলি আমায় তখন আর টানত
না। আমার যৌবনে তাঁকে মনে রেখেছি তাঁর বই
খুব্ পড়ি সেকথা মিথ্যে। এখন নিরবধি তাঁর গান গাই শুনি। সারাজীবনে কিছু কবিতাও
আবৃত্তি করেছি। গানও। আসলে রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া কখনো থাকি নি আবার রোজ রোজ
রবীন্দ্রনাথকে গুরু গুরু করে জপ করা- কোনটাই আমার জীবনে হয় নি। তিনি আছেন। ব্যস।
সংশপ্তক: রবীন্দ্র-প্রতিভার ঠিক কোন দিকটি, আপনার
যৌবনের পর্বে বেশি মাত্রায় আন্দোলিত করেছিল আপনাকে?
জয়া: করেনি।
কারণ তাঁকে ছাড়িয়ে তখন অন্য দিকে মন। তবে নাটকে তাঁকে তখনও চর্চা করেছি। রক্তকরবী
করতে গিয়ে দেখেছি মনস্তত্বের কি মারাত্মক ব্যাখ্যা। তবে সেই সবের গভীরতা কতটা তখন
বুঝতে শুরু করেছি তাতে সন্দেহ আছে। আমার আসলে ওইসব বোঝার মত পরিণত মন ছিল না। তবে
প্রতিদিনই তো আমরা একটু একটু করে পরিণত হই।
সংশপ্তক: এই
যে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিত্য নতুন নানা ভাবে আবিষ্কার করি,
এই বিষয়টি আপনি কি ভাবে ব্যাখ্যা করবেন? আমাদের এই ধারাবাহিক ভাবে রবীন্দ্রমানস
আবিস্কার আসলেই রবীন্দ্রনাথেরই সাথে পথ চলা নয় কি? না কি এই আবিস্কারের সাথে
আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্বের আত্মিক যোগ ততটা নেই যতটা মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির যোগ
আছে?
জয়া: মেধা যখন বুদ্ধি ছাপিয়ে অনুভবের চরমে পৌছায়,
রবীন্দ্রনাথকে বোঝা ঠিক তখন থেকে শুরু হয়।
আমার মনে হয় জীবন অনেকখানি যাপন করে না এলে রবীন্দ্রনাথ কে মর্মে মর্মে
অনুভব করা যায় না। এটা অনেকটা গীতা পাঠের মত। প্রথমে কেবল শ্লোক মুখস্থ করা। তারপর
সময় হলে তার জারণ প্রক্রিয়া শুরু।
সংশপ্তক: রবীন্দ্রপ্রতিভার কোন দিকটি
আপনাকে বেশি করে টানে ও কেন?
জয়া: তাঁর সঙ্গীত। এর উত্তর আর নূতন কি হয়! সবাই যা জানে আমারও তাই। সব অনুভূতির
ছোঁয়া পাই তাঁর গানে । তবে আমার কাছে মানুষ রবীন্দ্রনাথ অনেক বেশী কাছের। আমার
কাছে মনে হয় তিনি সেই মাঝি যিনি দুর্জয় ঝড়েও পাল শক্ত করে ধরে রেখে যাত্রী পার
করান। একবার তাকিয়ে দেখো মানুষটার ব্যক্তি জীবন। কঠোর ব্রহ্মচর্যে কেটেছে সেইকাল।
রাত তিনটে থাকতে উঠে পড়েছেন আজীবন। সেই হিমালয়ে বাবার সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে যার শুরু
সারা জীবন তা করেছেন। সেই ছোটবেলা থেকে। অত ধনী পরিবারের ছেলে মানুষ হয়েছেন কৃচ্ছ
সাধনের মধ্য দিয়ে। দুটির বেশি জামা পড়েন নি, পছন্দের খাবার হলে মানুষ মায়ের কাছে
আবার চাইবার আবদার করে। দাসদাসীর হাতে মানুষ তিনি সেটুকুও চাইতে পারেন নি। মা মারা
গেলেন ১১ বছরে। ভাবো একবার ঐ কাঁচা বয়স... আর ,মাতৃহারা বালক! কার কাছে যান বলতো
নিজের কথা বলতে? যখন বউদিদি কে পেলেন তিনি তাঁর প্রাণের কাছে এলেন। কিন্তু সেও তো
অল্প ক’বছর পাওয়া। বোলপুরের অসহ্য গরমে
শুনেছি তিনি দরজা জানলা হাট করে খুলে লিখতেন। আশি বছরের জীবনে তিনি জমিদারি
সামলালেন, বিদেশ ভ্রমণ করলেন, পিতার দায় রক্ষা করলেন আবার অসীম সৃষ্টি করে গেলেন।
মানুষটার পরিশ্রমের পরিধি দেখো। মন খারাপ কে ডিঙিয়ে সরস্বতীকে ধরে জীবন কাটালেন।
শমী মারা গেলে তাঁর ব্যক্তিবিয়োগের কষ্ট অনন্তের সঙ্গে মেলালেন।
মৃণালিনী র সঙ্গে বিবাহিত জীবনের ১৭ বছরই সম্ভবতঃ তাঁর সবচেয়ে সুখের সময়। এত মানুষ
তাঁর চার দিকে। সবাই তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ। আরে শিল্পীরাও মানুষ। তাঁদের ও রাগ দুঃখ
ঝগড়া মন খারাপ সব হয়। সেই সময় সেই কথা তাঁদেরও ইচ্ছে করে নিজের মানুষকে জানাতে। এত
প্রতিভার ছটায় ব্যক্তি তিনি সেই পরশ কতটুকু পেয়েছেন? আমি তো তাঁর মত দুঃখী দেখি
না। আবার এও দেখি তাঁর দুঃখকে জয় করে
সৃষ্টি করে যাওয়ার দার্ঢ্য। তিনি কাঁদান কিন্তু কাঁদেন না। দাঁতে দাত চেপে
মানুষকেই বরং উজ্জীবিত করেন গানে কবিতায় শিল্পে। আমি তাঁর এই গুণেই মুগ্ধ।
সংশপ্তক: বর্তমানে আপনার ব্যক্তিগত
জীবন যাপন ও সংস্কৃতি চর্চার পরিসরে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতির চিত্রটির স্বরূপ ও
বিকাশ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন।
জয়া: আমি ভবানীপুর আনন্দম বলে একটি নাট্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। সেটি আমরা কজনই
গড়েছিলাম। রবীন্দ্রনাথের নোবেল জয়ের ১০০ বছর উপলক্ষে আমি তাঁর যোগাযোগ উপন্যাসটি
নাট্যরূপ দিই। সেটিকে আগেই মঞ্চস্থ করেছি। ২৮ শে মে ২০১৫ আবার করতে চলেছি সুজাতা
সদনে। আর গান তো আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। সেকথা বলার কোন মানে হয় না। আমরা যে
নিঃশ্বাস ফেলি ক্রমাগত সেকথাটাও কি আর কাউকে বলি? এটি সেইরকম একটি বিষয়।
সংশপ্তক: আধুনিক বাঙালির সমাজ জীবনে
রবীন্দ্রনাথের অপরিসীম প্রভাব সম্বন্ধে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল, তবু তিনি যে সমাজ-ভাবনার
দিশা দিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের সমাজ আদৌ সেই পথে এগোয়নি। তিনি জোর দিয়েছিলেন গ্রামীন
অর্থনীতির স্বনির্ভরতার উপর। তিনি চেয়েছিলেন ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে
সমবায় প্রথার বিকাশ সাধন। আমরা কবির সমাজ-ভাবনার এই দিকগুলিকে সর্বতোভাবে সম্পূর্ণ
অগ্রাহ্য করেছি।এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
জয়া: না সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছি এতটা কঠোর কথা বলতে চাই না। সমবায় প্রথার ওপর জোর
দেবার কথা তিনি রাশিয়া ভ্রমণ সেরে এসে লিখে ছিলেন। জওহরলাল নেহরু প্রধানমন্ত্রী
হবার পরে সেই দিকে কিছু কাজ করেছিলেন। গ্রামীন অর্থনীতির উন্নতির নামে ছদ্মনামে
জোতদার-ই শোসনই রয়ে গেছে আজও। বামপন্থীরা
পশ্চিমবঙ্গে শাসন করার সময় শুরু করেছিলেন সমবায় প্রথার টথার এইসব কাজই। তারপর কি
হলো সেই সবের তা তো আমরা সবাই জানি। আসলে
রাজনীতির নীতি অংশটির বিলোপ সাধনের পরে ভারতের জনগণের হাতে পেন্সিলই রয়ে গেছে। আর
এখন তো আগ্রাসী ধনতন্ত্রের যুগ। মাল্টি ন্যাশানাল অর্থ মাফিয়া ব্যবসায়ীদের হাতে
দেশের অর্থনীতিকে ধর্ষিত হতে দেখছি প্রতি মুহূর্তে। রবীন্দ্রনাথ এখন মাথায় থাক,
এখন দৌড় মাৎস্যন্যায়ের। অন্য কোন দেশ হলে শেষ কথা বলে দিতে পারতাম। ভারত বলেই তা
বলব না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মত হচ্ছে শুধু সমবায় প্রথায় বা গান্ধিজীর মতে শুধু
চরকা কেটে আধুনিক পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ জানানো সম্ভব না। দরকার প্রাথমিক ক্ষেত্র
গুলিতে সরকারী কল্যাণকর পদক্ষেপ এবং দ্বিতীয় স্তরের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র গুলিকে
প্রতিযোগিতার মুখে ফেলা। তাতে করে দেশের জনগণের প্রাণধারণের সঙ্গে উন্নত জীবন
মানেরও সমন্বয় সাধন করা যাবে।
সংশপ্তক: আরও একটি বিষয়কে কবি
দ্ব্যার্থহীন ভাবে তুলে ধরেছিলেন, সে হল শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্ব! তিনি খুব
সুস্পষ্ট করেই বলেছিলেন বারো বছর বয়স অব্দি শিশুদের শুধুমাত্র মাতৃভাষাতেই শিক্ষা
দেওয়া উচিৎ। অথচ আজকের দুই বাংলায় নার্সারি থেকেই স্বছ্বল পরিবারের শিশুদের ইংরেজী
মাধ্যমের স্কুলগুলিতেই ভর্ত্তি করার জন্যে অভিভাবকরা আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লাগেন। এই
বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
জয়া: সেতো বটেই। আসলে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এবং তার মাতৃভাষা সংস্কৃত। কবির
পরামর্শ মত ইংরিজী শিক্ষার শুরু ১২ বছর বয়সেই শুরু করা উচিত। তবে তার আগে শুধু
বাংলা নয় সেই সঙ্গে সংস্কৃত শিক্ষাও সমান গুরুত্বে শেখান উচিত। ইংরিজী আসুক তিন
নম্বরে। আর অভিভাবক দের দোষ দেওয়া যায় না। তারা একটা ডেথ ট্র্যাপে পড়ে আছেন। তুমি
ইস্কুল গুদামে ভর্তি করালে সেটা দোষ। আর না করালে বাচ্চা গোমুখ্যু হয়ে রইল! এই
ব্যাপারটা প্রতিটি পরিবার যদি নিজের জোরে বাচ্চাকে না তার শিকড়ের সন্ধান দেয়,
তাহলে ঐ ইঁদুর কলে ছুটোছুটি করেই মরতে হবে এবং নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি করে অসহায়
করে রেখে দেব। শিক্ষা ব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথ বা অরবিন্দ বা বিবেকানন্দের আদর্শ
গুলির একটি সমন্বয় করে প্রয়োগ করা দরকার। সেটি বিদগ্ধ মন্ডলী তৈরী করে দিন সরকার
সেটি প্রয়োগ করুন বাধ্যতা মূলক ভাবে। আর সঙ্গে রাখুন প্রতিটি পরিবারের অভিভাবক
দের। তাদেরকেও প্রয়োজনে শিক্ষিত করে নিন এই ব্যাপারে।
সংশপ্তক: বর্তমান শতাব্দিতে বিশ্বায়ন
নিয়ে আমরা সবাই বিপুল ভাবে উৎসাহিত, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বের কোনে কোনে ছড়িয়ে
দেওয়ার বিষয়ে আমাদের মধ্যে ততটা উৎসাহ নেই বলেই মনে হয়। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
কি ভাবে ও কারা এই বিষয়ে সঠিক দায়িত্ব নিতে পারে বলে মনে করেন আপনি?
জয়া: সরকার সরকার সরকার। তবে আমলা চালিত মনোভাব নিয়ে নয়। চেনা ২০০ টা গান আর ১০টা
নাটক এর চর্বিত চর্বণ নয়। নতুন নতুন দিকে আলো ফেলতে হবে। আমরা আসলে পুরো রচনাবলী
কেউই পড়ি নি। অল্প জেনেই তাঁকে কোট করি। তাঁর ছবির সম্পর্কে সরকারী উদ্যোগে কোন
কাজ হয়েছে কি? আর বিশ্বের কোণে যদি তাঁর রচনা ছড়িয়ে দেবার কথা বলো তাহলে বলব-
সবসময়েই দু রকম গ্রহীতা থাকে সংসারে। একদল গড়পড়তা। একদল বিশেষ। রবীন্দ্রনাথকে এই
দুই দিকেই প্রচার দরকার। যারা ধ্রুপদী সাহিত্য ভালবাসেন তাঁদের জন্য অনুবাদে ছড়িয়ে
দাও রবীন্দ্রনাথকে। আর পাশ্চাত্যে তাঁকে সবচেয়ে সহজে ছড়ান যায় আঁকার মাধ্যমে। সেই
দিকে ভাবনা কই?
সংশপ্তক: আমাদের বাঙালি সমাজের তরুণতর
প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা কি ক্রমহ্রাসমান? যদি তাই হয়, তবে তার
মূলগত কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?
জয়া: আম বাঙালি তাঁর গান ছাড়া আর কিছু চর্চা করেন
কি না সন্দেহ। তরুণ প্রজন্মেরও গিটার সহযোগে তাঁকে গাইবার প্রবণতা। মন্দ কি! আর
কোন দেশেই এখন ক্লাসিক কিছুর চাহিদা নেই। কারণ মানুষের সময় কম। চটজলদির ভক্ত তারা।
যুগোপযোগী চলচ্চিত্র হোক রবীন্দ্র সৃষ্টি নিয়ে। লোকে নেবে বই কি!
সংশপ্তক: রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ছোট আমি থেকে বড়ো আমি
হয়ে ওঠার গুরুত্বের কথা, “আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে
বিশ্বলোকের পাবি সাড়া”; তবু যেন আমরা ক্রমেই ছোট ছোট আমির দূর্ভেদ্যে খোলসের
মধ্যেই ঢুকে যাচ্ছি ক্রমশ। এই বিষয়টি আপনাকে কতটা আহত করে বা বিচলিত করে?
জয়া: করে, তবে অসুখ গোড়াতে। ছোট থেকে আমরা মা
বাবাই সন্তানকে স্বার্থপর হতে শেখাই । আগে মা বাবাকে শিক্ষিত হতে হবে। তবে তো
বিশ্ব সাথে যোগে আছি সেই বোধ হবে।
সংশপ্তক: আগামী
প্রজন্মের ভবিষ্যতের বাংলায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু থাকবে বলে আপনি
আশাবাদী?
জয়া: থাকবে।
যব তক চাঁদ সূরয রহেগা/ ঠাকুর তেরা গীত
রহেগা...
হা হা হা তাঁর গান থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
আর মুক্তি আমরা চাইও না। প্রণাম তাঁকে।
[জয়া চৌধুরী: বিশিষ্ট সাহিত্যিক নাট্যব্যক্তিত্ব সুঅভিনেত্রী
ও বহুভাষাবিদ]