সংশপ্তক: অধিকাংশ বাঙালিরই
রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রথম পরিচয় সহজ পাঠের পাতায়! তারপর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে
তাঁর সাথে প্রথম আলাপ যার যার নিজস্ব পরিসরে এক এক রকম ভাবে গড়ে ওঠে। আপনার
ক্ষেত্রে সেই প্রথম আলাপ গড়ে ওঠার গল্পটা যদি একটু বলেন আমাদের!
আলোলিকা: রবীন্দ্রনাথের
সঙ্গে প্রথম পরিচয় পাঁচ বছর বয়সে স্কুলের বাংলা ক্লাসে। সে সময়ে কিন্ডারগার্টেনের বদলে আমরা
পড়তাম ইনফ্যান্ট ক্লাসে। "ছোট খোকা বলে অ আ" আর "উশ্রী নদীর তীরে ঝর্ণা দেখতে যাবো" দিয়ে বাংলা লেখা
পড়ার হাতে খড়ি| তারপর "শিশু",
"শিশু ভোলানাথ"। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে মুখস্থ কবিতা আবৃত্তির
আগে চাপা উদ্বেগ, গানের
স্কুলে হাতে তাল দিয়ে "ওরে বকুল পারুল, ওরে শাল পিয়ালের বন" গাওয়ার উচ্ছাস... এমন সব অনুসঙ্গ নিয়ে আমার শৈশব| বাড়ির পরিবেশ,
রবীন্দ্রনাথের লেখা শিশুপাঠ্য বই, নাচ
/ গান শেখার স্কুল, রেডিও আর গ্রামাফোন রেকর্ডের মধ্যে দিয়ে
"রবিঠাকুর" এলেন আমার জীবনে|
সংশপ্তক: একটু গভীর ভাবে দেখলে আমরা দেখতে পাই, আমাদের যার যার জীবনে
শৈশবের রবীন্দ্রনাথ কৈশোরের রবীন্দ্রনাথ যৌবনের রবীন্দ্রনাথ আসলেই ক্রমশ প্রকাশ্য
রবীন্দ্রনাথের একটা ধারাবাহিক পর্বই! আমরা যার জন্যে ঠিক প্রস্তুত থাকি না, অথচ এই
ধারাবাহিক ভাবেই কবি যেন আমাদেরকেই প্রস্তুত করে তোলেন আমাদের জীবনের পূর্ণ
উদ্বোধনের জন্যেই! আপনার ব্যক্তি জীবনের গড়ে ওঠার পর্বে রবীন্দ্রনাথ কিভাবে প্রভাব
বিস্তার করেছিলেন সেই গল্পটা যদি বলেন।
আলোলিকা: রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ধারাবাহিক ভাবে পড়েছে জীবনের বিভিন্ন পর্বে| স্কুল জীবন পর্য্যন্ত, তাঁর গান,
কবিতা, নৃত্যনাট্যই ছিল আমাদের সংস্কৃতি চর্চার
প্রধান বিষয়। আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন কবি বিষ্ণু দের স্ত্রী
প্রণতি দে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলির অন্যতম নির্দেশক ছিলেন কবি ও শিল্পী জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। একের পর এক রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ও নাটকগুলি "নিউ এম্পায়ার" এ মঞ্চস্থ করার আগে দীর্ঘ অনুশীলনের
সময়ে প্রণতিদি ও জ্যোতিরিন্দ্রবাবু আমাদের কাছে নাটকের মূলভাবনা, চরিত্র ও গানগুলি
প্রসঙ্গে আলোচনা করতেন। এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আজ ও অনুভব
করি। কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসাবে যেমন রবীন্দ্রসাহিত্য
পাঠের সুযোগ পেয়েছি, তেমনভাবে সেসময় রবীন্দ্রনাথকে ঘিরেই ছিল আমাদের
যাবতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রসাহিত্য পড়াতেন প্রমথনাথ
বিশী, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, আশুতোষ ভট্টাচার্য্য। আমার স্পেশাল পেপার ছিল "নাটক"। খুবই সৌভাগ্য যে এমন গুনী অধ্যাপকদের
কাছে রবীন্দ্রনাটক পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। এভাবেই জীবনের অধ্যয়ণপর্বে রবীন্দ্রসাহিত্যের
সঙ্গে পরিচয় আর উপলব্ধির যথাসাধ্য প্রয়াস।
সংশপ্তক: রবীন্দ্র-প্রতিভার ঠিক কোন দিকটি, আপনার
যৌবনের পর্বে বেশি মাত্রায় আন্দোলিত করেছিল আপনাকে?
আলোলিকা: যৌবনের পর্বে বেশীমাত্রায় আন্দোলিত করেছিল রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস
ও ছোটগল্প। কোটেশন খাতায় তুলে রাখতাম "ঘরে বাইরে",
"গোরা", "শেষের কবিতা"-র উদ্ধৃতি। ছোটগল্প লেখার রীতি বা প্রকৌশল
প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন - "গোষ্পদে
যেমন আকাশের ছায়া পড়ে"। অর্থাৎ ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যে বিশালত্বের
প্রতিফলন। "গল্পগুচ্ছ" এর গল্পগুলিতে সেই স্টাইল বজায় রেখে কি অসামান্য কাহিনী
ও চরিত্রসৃষ্টি করেছেন। "পোস্টমাস্টার" এর শেষ কয়েকটি লাইন
মনে পড়ে।
সংশপ্তক: এই
যে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিত্য নতুন নানা ভাবে আবিষ্কার করি,
এই বিষয়টি আপনি কি ভাবে ব্যাখা করবেন? আমাদের এই ধারাবাহিক ভাবে রবীন্দ্রমানস
আবিস্কার আসলেই রবীন্দ্রনাথেরই সাথে পথ চলা নয় কি? না কি এই আবিস্কারের সাথে
আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্বের আত্মিক যোগ ততটা নেই যতটা মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির যোগ
আছে?
আলোলিকা: রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্ন পর্যায়ে আবিষ্কার নয়, অন্বেষণের প্রচেষ্টাই ছিল বেশী। "কমলহীরের পাথরটাকে বলে বিদ্যে"|
আমরা তার মধ্যে মেধা আর বুদ্ধিবৃত্তির পালিশ দিয়ে কালচারড হতে চেয়েছি
হয়ত কফি হাউসের আড্ডায় আর মননদীপ্ত রবীন্দ্র আলোচনার আসরে। কিন্তু পরিণত বয়সে এসে অন্য উপলব্ধি হয়। তাঁর ব্যক্তিজীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, শোক ও বেদনার উর্দ্ধে স্থৈর্য,
বিশ্বাস ও অধ্যাত্মচেতনার যে পরিচয় তাঁর গান, কবিতা,
প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্যের মধ্যে পাই, সেই ভাবনা
আমাকে অনুপ্রাণিত করে। দুখের রাতে নিখিল ধরা যেদিন করে
বঞ্চনা, তোমারে যেন না করি সংশয় - এমন দীক্ষা স্মরণ রাখার প্রাণপন চেষ্টাই সম্ভবত আমার জীবনে রবীন্দ্রনাথের চিরস্থায়ী
প্রভাব|
সংশপ্তক: রবীন্দ্রপ্রতিভার কোন দিকটি আপনাকে বেশি করে টানে ও কেন?
আলোলিকা: রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা আর প্রবন্ধ। অল্পবয়সে যে সব গানের বাণীর তাৎ
পর্য্য বুঝিনি, ক্রমশ জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে
তার মর্মার্থ অনুভব করি। "পথে চলে যেতে যেতে", "বিপুল
তরঙ্গ রে", এমন সব গান যখন শুনি, কেমন
এক অপার্থিব অনুভূতি হয় । কবিতার ক্ষেত্রে ও কত যে অনুসঙ্গ
। "ছোট্ট মেয়ে রোদ্দুরে দেয় বেগনি রঙের শাড়ি"
থেকে "কৃপণ" কবিতার
"দিলেম যা রাজভিখারীরে স্বর্ণ হয়ে এলো ফিরে ... তোমায় কেন দিইনি আমার সকল শূন্য করে" । "বলাকা"র মুক্তছন্দ,
"পুনশ্চ"র গদ্যছন্দ, কবিতার মনিমুক্ত ছড়িয়ে আছে কাব্যগ্রন্থের পাতায় পাতায়। রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের বিষয় অনেক অর্থেই সমকালীন| দেড়শ বছরের ব্যবধানে ও কত প্রাসঙ্গিক। পরীক্ষা পাশের জন্য যখন "সভ্যতার
সংকট" পড়তে হয়েছিল, তখন অবশ্য নীরস
লেগেছিল। অথচ ইদানীং কালে স্কুলের শিশুবয়সের ছাত্রছাত্রীদের প্রাণান্তিকর অবস্থা দেখে "তোতাকাহিনী" রূপক-রচনার পাখীটাকেই মনে পড়ে। এডমিশন টেস্টের অগ্নিপরীক্ষার
কথা জেনে দুঃখ হয়|
সংশপ্তক: বর্তমানে আপনার ব্যক্তিগত
জীবন যাপন ও সংস্কৃতি চর্চার পরিসরে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতির চিত্রটির স্বরূপ ও
বিকাশ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন।
আলোলিকা: দীর্ঘ প্রবাসজীবনে
রবীন্দ্রচর্চা যেটুকু অব্যাহত আছে, তা
বাঙ্গালী পরিবেষ্টিত পরিবেশ ও ক্লাবগুলির জন্য। নিউ জার্সিতে তিনবার "রবীন্দ্র মেলা" উপলক্ষ্যে সাহিত্যসভা,
নৃত্যনাট্য, গান, শ্রুতিনাটক,
আবৃত্তির অনুষ্ঠান হয়েছে| নিউ ইয়র্কে রবীন্দ্রনাথের
একশ পঁচিশতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্য স্টেট থেকেও কয়েকটি সংস্থা
যোগ দিয়েছিল। সে সময় সক্রিয় ভাবে জড়িত থাকতাম| ক্রমশ নতুন প্রজন্মের পাঠকের কাছে (দেশে
/ বিদেশে) রবীন্দ্ররচনার আকর্ষণ কতখানি সে সম্পর্কে
কোনো ধারণা দেওয়া যাচ্ছেনা| আমেরিকায় অন্যান্য স্টেটগুলির খবর
রাখি না। তবে নিউ ইয়র্ক / নিউ জার্সি অঞ্চলে বার্ষিক রবীন্দ্রজয়ন্তী
পালন নিয়ে বাঙ্গালীদের আগের মত উদ্যোগ, উৎসাহ আর দেখি না। অতএব সংস্কৃতি চর্চার পরিসরটি ও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। তবু কবির দেড়শ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে
কিছু মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়েছে।
সংশপ্তক: আধুনিক বাঙালির সমাজ জীবনে
রবীন্দ্রনাথের অপরিসীম প্রভাব সম্বন্ধে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল, তবু তিনি যে
সমাজ-ভাবনার দিশা দিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের সমাজ আদৌ সেই পথে এগোয়নি। তিনি জোর
দিয়েছিলেন গ্রামীণ অর্থনীতির স্বনির্ভরতার উপর। তিনি চেয়েছিলেন ধনতান্ত্রিক
অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে সমবায় প্রথার বিকাশ সাধন। আমরা কবির সমাজ-ভাবনার এই
দিকগুলিকে সর্বতোভাবে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছি।এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
আলোলিকা: এ বিষয়ে আমার কোনো
বক্তব্য নেই।
সংশপ্তক: আরও একটি বিষয়কে কবি দ্ব্যর্থহীন
ভাবে তুলে ধরেছিলেন, সে হল শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্ব! তিনি খুব সুস্পষ্ট করেই
বলেছিলেন বারো বছর বয়স অবধি শিশুদের শুধুমাত্র মাতৃভাষাতেই শিক্ষা দেওয়া উচিৎ। অথচ
আজকের দুই বাংলায় নার্সারি থেকেই স্বছ্বল পরিবারের শিশুদের ইংরেজী মাধ্যমের
স্কুলগুলিতেই ভর্ত্তি করার জন্যে অভিভাবকরা আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লাগেন। এই বিষয়ে
আপনার অভিমত কি?
আলোলিকা: শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যকে
সম্পূর্ণ সমর্থন করা সত্বেও, সময় ও পরিস্থিতির
পরিবর্তনকে অস্বীকার করা যায় না| বিশ্বায়নের যুগে, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের প্রবল প্রতিযোগিতায় যারা সামিল হতে চলেছে, মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরাজী মাধ্যমের শিক্ষাও তাদের বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। মাতৃভাষার সঙ্গে ইংরাজী শিক্ষার কোনো বিরোধ নেই।
সংশপ্তক: বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বায়ন নিয়ে আমরা সবাই বিপুল ভাবে
উৎসাহিত, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বের কোণে কোণে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের মধ্যে
ততটা উৎসাহ নেই বলেই মনে হয়। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি? কি ভাবে ও কারা এই বিষয়ে সঠিক
দায়িত্ব নিতে পারে বলে মনে করেন আপনি?
আলোলিকা: রবীন্দ্রসাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রধান
অন্তরায়, ভাষা। অনুবাদের ক্ষেত্রে সর্বস্তরেই
উদ্যোগের অভাব। বিশ্বভারতী ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্যের
ওপর নির্ভর করা ছাড়াও আন্তর্জাতিক স্তরে আবেদন করতে পারে। সাহিত্যের অনুবাদ তো শুধুমাত্র
ভাষান্তর নয়। তেমন যোগ্যতা সম্পন্ন পন্ডিত মানুষজনের সাহায্য ব্যতীত এ দুরূহ কাজ সম্পন্ন করা
সম্ভব নয় । ভারতের কর্পোরেট হাউসগুলি সংস্কৃতির অনেক ক্ষেত্রেই যেমন প্রচার ও প্রসারে আর্থিক
সহায়তা দেয়, নোবেলজয়ী কবির রচনার অনুবাদের ক্ষেত্রেও সেই
উদ্যোগ কি নিতে পারে না ?
সংশপ্তক: আমাদের বাঙালি সমাজের তরুণতর
প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা কি ক্রমহ্রাসমান? যদি তাই হয়, তবে তার
মূলগত কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?
আলোলিকা: এ প্রসঙ্গে আমেরিকার বাঙ্গালীদের কথা বলতে পারি। সত্তরের দশকে আসা বাঙ্গালীরা নস্টালজিয়ার সঙ্গে গীতবিতান, সঞ্চয়িতাও এনেছিল। নিউ ইয়র্কে "টেগোর সোসাইটি" হয়েছিল। শিকড় হারালে বড় কষ্ট। এই চিন্তায় ইংরিজী হরফে রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখে ছোট ছেলেমেয়েদের দিয়ে গান গাওয়ানো, কবিতা
আবৃত্তি, "চন্ডালিকা", "বাল্মীকি প্রতিভা" মঞ্চস্থ করা - দেশজ সংস্কৃতির চারাটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য কতো আয়োজন। আমাদের ছেলে মেয়েরা বাবা, মায়ের প্রগার
উৎসাহে কলেজ পর্য্যন্ত রবীন্দ্র কালচারের ধারক-বাহক হওয়ার যথাসাধ্য
চেষ্টা করেছিল। সে পতাকা যথাকালে অর্ধনমিত হয়েছে। এখন ধামাকার যুগ। দুর্গাপুজো থেকে বার্ষিক বঙ্গসম্মেলন, বঙ্গমেলায়
- রবিঠাকুর কোথায় তোমার স্থান? দেশ থেকে আসা তরুণ
প্রজন্মের জলসায় নয়, প্রবাসী প্রৌঢ় দম্পতির বই এর তাকে রবীন্দ্র
রচনাবলীর পাতা খুলে শুধু বলতে পারো - এই খানে মোর স্থান।
[আলোলিকা মুখোপধ্যায়: প্রবাসী সাহিত্যিক]